দর্জি থেকে পান চাষে সফল জহিরুল

‘বাটা ভরা পান দেবো, গাল ভরে খেয়ো’ ছড়ার এই লাইনের কথাতেই অনুধাবন করা যায় পান বাঙালির আতিথেয়তার অন্যতম এক অনুসঙ্গ। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান, পালা-পার্বণ, বিয়েসহ যে কোনো আয়োজনে সবশেষে যেন পান থাকতে হবে। গ্রাম বাংলার এমনকি শহুরে বাঙালির অনেকেই খেয়ে থাকেন এই পান।

টাঙ্গাইলের নাগরপুরে প্রথম সেই পান চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জহিরুল ইসলাম (৩৫)। তিনি নাগরপুর উপজেলার মামুদনগর ইউনিয়নের ভাতশালা গ্রামের মৃত সরব আলীর ছেলে।

অন্যের টেইলার্সে দর্জির কাজ করে কোনো রকম সংসার চলতো জহিরুল ইসলামের। বাড়তি আয়ের আশায় তিনি নানা পরিকল্পনা করছিলেন। এ জন্য অনেকের কাছ থেকে পরামর্শও নেন তিনি। পরে রাজশাহীর এক আত্মীয়ের পরামর্শে টাঙ্গাইলে প্রথম পান চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন জহিরুল। নিজের কিছু জমি ও অন্যের জমি লিজ নিয়ে পান চাষ শুরু করেন জহিরুল। আর এই কাজে সফলও হয়েছেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুধু নাগরপুর নয় টাঙ্গাইল জেলার কোথাও বাণিজ্যিকভাবে পান চাষ হয় না। কিন্তু জেলার প্রতিটি উপজেলাতেই পান খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।

জহিরুল ইসলাম বলেন, পার্শ্ববর্তী দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি বাজারে একটি টেইলার্সের দোকানে দর্জির কাজ করতাম। ওই কাজ করে যা আয় হতো, তা দিয়ে মোটামুটি সংসার চলছিল। তখন থেকেই চিন্তা করতে থাকি আলাদা কিছু করার। সেসময় রাজশাহী থেকে আমার এক বন্ধুর ভাগ্নে আসেন গ্রামে বেড়াতে। বন্ধুর ওই ভাগ্নে বজলুর রহমানের কাছে পান চাষের বিষয় জানতে পারি। পান চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। এ কথা জানার পর রাজশাহীর দুর্গাপুর গিয়ে পান চাষ দেখে আসি। এরপরই এই ফসলটি উৎপাদনে উৎসাহ বেড়ে যায়। নিজের কয়েক শতাংশ জমি এবং পাশের এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু জমি লিজ নিয়ে দেড় বছর আগে রাজশাহী থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার পানের চারা নিয়ে আসি। ২৫ শতাংশ জমিতে চারা লাগিয়ে নেই। তারপর পাটখড়ি দিয়ে চারিদিকে ভেড়া ও উপরে ছাউনি দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করি। চারা কেনা থেকে ছাউনি তৈরি ও পরিচর্যা পর্যন্ত খরচ হয় প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। গত নয় মাস ধরে পান তুলতে শুরু করেছি।

তিনি আরও বলেন, শুরুতে নিজের এলাকার বিভিন্ন দোকানে পান বিক্রি করতাম। এখন দিন দিন পানের উৎপাদন বাড়ছে। তাই শুধু নিজের এলাকা নয়, ঢাকা ও রাজশাহীতেও পান পাইকারি বিক্রি করছি। গত ৯ মাসে যে পান বিক্রি করেছি, তাতে আমার বিনিয়োগ উঠে গেছে। এখন যা বিক্রি করছেন তার সবটুকুই লাভ।

জহিরুল বলেন, আগে চিন্তায় ছিলাম। এখানে পানের উৎপাদন হবে কি না। এখন সে চিন্তা কেটে গেছে। অন্য এলাকার মতো আমাদের এলাকাতেও পান চাষ সম্ভব। এটা প্রমাণিত হয়েছে। আর্থিক সহায়তা পেলে আরও জমি লিজ নিয়ে পান চাষ করার ইচ্ছা আছে আমার।

এদিকে, জহিরুলের সফলতা দেখে এলাকার আরো অনেক মানুষ উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন পান চাষে।

ভাতশালা গ্রামের মো. সোলায়মান জানান, জহিরুলের পান চাষ দেখে জানতে পেরেছি অন্য অনেক ফসলের চেয়ে পান চাষ অনেক সহজ। এতে খরচ ও শ্রম অনেক কম দিতে হয়। আমিও পান চাষের চিন্তা করছি।

সোনা মিয়া নামের অপর এক কৃষক জানান, পানের চাহিদা সারা বছর থাকে। টাঙ্গাইলের জমি পান চাষের উপযোগী এটি প্রমাণ হয়েছে। নিজের জমিতে পান চাষ শুরু করবো।

নাগরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বিশ্বাস জানান, জহিরুল পান চাষ করে সফল হয়েছেন। পান অর্থকরি ফসল। কৃষি বিভাগ থেকে জহিরুলকে এবং অন্য যারা পান চাষে এগিয়ে আসতে চান তাদের সহযোগিতা করা হবে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.