ছয় মাস পর পর আসামিকে ডোপ টেস্ট দিতে হবে

মাদক মামলায় প্রবেশন সুবিধা

মাদক মামলায় প্রবেশনে থাকা আসামিকে প্রতি ছয় মাস অন্তর ডোপ টেস্ট করতে হবে। ডোপ টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ হলে তার প্রবেশনে থাকার আদেশ বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রবেশনে থাকা আসামি চিকিৎসক ব্যতীত কোনো মাদকদ্রব্য ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না মর্মে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট।

মাদক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামিকে প্রবেশনে পাঠানোর পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন শর্ত আরোপ করা হয়েছে। রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত যে কোনো অপরাধ সমাজবিরোধী। এটা জাতিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে, কোনো সন্দেহ নেই; সময় এসেছে এ ধরনের অপরাধকে এখন কঠোরভাবে দমন করতে হবে। ‘মতি মাতবর বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় এমন নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছেন বিচারপতি জাফর আহমেদের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। সম্প্রতি পূর্ণাঙ্গ এ রায় প্রকাশ পেয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে।

ঐ রায়ে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালতের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর দ্রুত আসামিকে ডোপ টেস্ট করতে হবে। ডোপ টেস্টে আসামির মাদক গ্রহণের সংশ্লিষ্টতা মিললে প্রবেশন আদেশ বাতিল করতে পারবে। এছাড়া প্রয়োজনে আরো শর্ত আরোপ করে আসামিকে প্রবেশন অফিসারের অধীনে পর্যবেক্ষণে রাখার আদেশ দিতে পারবে নিম্ন আদালত। প্রবেশনে থাকাকালীন আসামি কোনো শর্ত ভঙ্গের অপরাধে তাকে কারাগারে পাঠানোর সুযোগ রয়েছে।

এদিকে উচ্চ আদালতের পাশাপাশি নিম্ন আদালতের বিচারকরাও বিভিন্ন মামলায় দণ্ডিত আসামিকে প্রবেশনে পাঠানোর আদেশ দিচ্ছেন। দি প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০ এর বিধান অনুযায়ী আদালত এই আদেশ প্রদান করছে। ঐ আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোনো অপরাধসহ দণ্ডবিধির অন্য কিছু ব্যতিক্রমধর্মী অপরাধ ব্যতীত অন্যসব অপরাধের ক্ষেত্রে আদালত তাত্ক্ষণিকভাবে সাজা আরোপ না করে উপযুক্ত ক্ষেত্রে আসামিকে এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত এক জন প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে থাকার নির্দেশ প্রদান করতে পারেন।

গত ২৬ নভেম্বর মাগুরার এক মাদক মামলায় এক আসামিকে প্রবেশনে পাঠিয়েছে আদালত। তাত্ক্ষণিক ছয় মাসের দণ্ড কার্যকর না করে জেলার প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে তাকে প্রবেশনে পাঠায় মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউর রহমান। প্রবেশনে থাকাকালে আসামি বিথুন মোল্লাকে এক বছরে প্রতি মাসে দুই বার মাদকবিরোধী প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে থেকে গাছ লাগানোসহ সাতটি শর্ত মেনে চলতে হবে। চলতি বছরে মাগুরার তিনটি আদালতে মাদকের তিনটি ও পারিবারিক বিরোধের একটি মামলায় এ ধরনের রায় দিয়ে আসামিদের প্রবেশনে পাঠানো হয়েছে। মাদকের আরেকটি মামলায় মাগুরার নয় যুবককে বই পড়া, গাছ লাগানোসহ সাত শর্তে প্রবেশনে দেওয়া হয়েছে। মাগুরার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গত ১০ মার্চ ঐ নয় যুবককে তিন মাসের দণ্ড দেন। কিন্তু সাজা কার্যকরের জন্য তাদের কারাগারে না পাঠিয়ে ছয় মাসের প্রবেশনে পাঠানো হয়।

গত ২২ নভেম্বর সুনামগঞ্জে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে দায়েরকৃত ১০ মামলার ১৪ শিশুকে সংশোধনের শর্তে এক বছরের জন্য পরিবারের কাছে প্রবেশনে পাঠিয়েছে। সংশোধিত হলে তাদের বিরুদ্ধে করা মামলার বিচার শুরু হবে না। সুনামগঞ্জের শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এ আদেশ দেন। এসব শিশুর বিরুদ্ধে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, ফেসবুকে অশ্লীল ও মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, মাদক রাখা ও জুয়া খেলার অপরাধ আনা হয়েছে। গত ৯ নভেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তিন আসামিকে প্রবেশনে দেওয়া হয়েছে।

অন্যের জমিতে অনধিকার প্রবেশ করে পাট কেটে নেওয়ার অপরাধে তাদের ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অরূপ কুমার বসাক। কিন্তু সাজা কার্যকরের জন্য তাদের কারাগারের পরিবর্তে প্রবেশন কর্মকর্তার অধীনে পাঁচটি শর্তে প্রবেশনে পাঠায়। শর্তের মধ্যে ছিল—বিদ্যমান আইন মেনে চলা, নালিশি ভূমিতে ফের কোনো বিরোধ সৃষ্টি না করা, কোভিড-১৯ এ মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। এছাড়া রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে বিভিন্ন মামলায় প্রায় ৩০ জন আসামি প্রবেশনে থেকে নিজেদের সংশোধন করছেন।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবেশনে থাকা আসামিরা আদালতের দেওয়া শর্ত ভঙ্গ করছে কিনা, সেটি সময়ে সময়ে নিম্ন আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে অবহিত করেন প্রবেশন অফিসার। যদি শর্ত ভঙ্গ করে তাহলে বিচারিক আদালত সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠিয়ে থাকেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.