গাইবান্ধায় সোনালি আঁশে কৃষকের মুখে হাসি

এক সময় পাট বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো। তবে সেই সোনালি দিন এখন না থাকলেও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বাড়ছে পাটের চাষ। এছাড়া চলতি বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২৮০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ১৩৫০ হেক্টর জমিতে করা হয়েছে। ক্রমেই উপজেলায় পাটের চাষ বাড়ছে।

সরেজমিনে নাকাই, রাখালবুরুজ, হরিরামপুর, কাটাবাড়ি, কামারহ, গুমানীগঞ্জ, কোচাশহর, দরবস্ত, ডুমুরগাছাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা জমি থেকে পাট কেটে পুকুর, ডোবা, খাল-বিলসহ বিভিন্ন নালায় জাগ দিচ্ছেন। কেউ আবার জাগ দেওয়া পাট থেকে আঁশ ছাড়িয়ে রোদে শুকাতে দিচ্ছেন। সবমিলে পাট প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে বিক্রির উপযোগী করে তুলতে ব্যস্ত তারা।

কথা বলে জানা যায়, পলিমাটিতে সময়মতো জৈবসার প্রয়োগ করলে পাট ভালো হয়। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে নিচু জমিতে পানি জমার কারণে পাটক্ষেতের ক্ষতি হয়। পাট মাটিতে পড়ে থাকলে উন্নতমানের আঁশ পাওয়া যায় না। বাজারে উন্নত আঁশের চাহিদা থাকায় দামও বেশি পাওয়া যায়।

কৃষকরা বলছেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলেও দাম ভালো পাওয়ায় অনেক খুশি পাট চাষিরা।

মীরকুচি মদনতাইড় গ্রামের পাটচাষি জোব্বার হোসেন বলেন, শ্রমিক সংকটসহ টানা খরার মধ্যে পাট কেটে জাগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম। তবে বাজারে পাটের দাম ভালো থাকায় খরচ তুলেও লাভ হয়েছে।

একই গ্রামের কৃষক আল আমিন বলেন, এবার এক বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি। গতবছরের চেয়ে এবার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। এক বিঘা জমিতে ৯ মণ পাট হয়েছে। প্রতি মণ ৩ হাজার ২০০ টাকা দামে বিক্রি করেছি। মনে হচ্ছে, পাটের সোনালি অতীত ফিরে আসছে।

হরিপুর গ্রামের রইচ উদ্দিন বলেন, এবার অন্য বছরের চেয়ে পাটের ফলন অনেক বেশি। তবে পানি সংকটে জাগ দিতে একটু সমস্যা হচ্ছে।

নাকাই গ্রামের পাটচাষি নুরুল মণ্ডল বলেন, প্রায় তিন বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছি। বীজ, নিড়ানি, পাট কাটা, জাগ দেওয়াসহ মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে। পাটের এমন দাম থাকলে চাষিরা লাভবান হবে এবং কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহ বাড়বে।

পাট ব্যবসায়ী সাজু মিয়া বলেন, এ উপজেলায় পাটের ব্যাপক ফলন হয়েছে। পাটের আঁশ ভালো হলে দামও বেশি। গত বছরের তুলনায় কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই মাহমুদ বলেন, শুরু থেকেই কৃষকদের রোগবালাই দমন, উন্নত জাতের বীজ, ফসল সংরক্ষণে পরামর্শের পাশাপাশি পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে দামও বেশ ভালো। তবে পানি সংকটের কারণে পাট জাগ দেওয়ায় একটু সমস্যা হচ্ছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.