এক মহীয়সীর জন্মদিন

আনোয়ারা সৈয়দ হক

আজ আমাদের দেশে একটি জন্মদিন এসেছে। এমন একটি জন্মদিন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে আর কারও আসেনি। কারণ আর কারও দেশে শেখ হাসিনা নামে কোনো মহীয়সীর জন্ম হয়নি।
এই শেখ হাসিনা আমাদের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের একজন অবিসংবাদিত জননেতা।
বিগত শতাব্দীতে যখন উদ্বাস্তু জীবন পেরিয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন, সেদিন তাঁকে স্বাগত জানাতে দেশজুড়ে নেমেছিল মানুষের ঢল।

তিনি সেই বিশাল জনতার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, আমি আজ সব হারিয়ে আপনাদের কাছে ফিরে এসেছি।

সেই জননেতা শেখ হাসিনা আজ আমাদের বাংলাদেশে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ পরিচালনা করছেন। তিনি মনের মধ্যে একটি প্রতিজ্ঞা নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। সেটি হলো সুযোগ হলে দেশটিকে গড়ে তোলা এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করা।
দেশকে গড়ে তোলা ছিল বিশাল একটি কর্মযজ্ঞ। নারীর ক্ষমতায়ন থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটানো; উত্তরবঙ্গের মঙ্গা ঠেকানো; দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের বন্যা ঠেকানো; দারিদ্র্য দূর, ভূমিহীনদের এক ফালি করে জমি ও গৃহদান; নারীকে দেশের বিভিন্ন শাসনকর্মে নিয়োগ; পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বিভিন্ন জায়গায় হাইওয়ে, পায়রা নদীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ; বস্ত্রশিল্প স্থাপন; দেশের নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড; খেলাধুলার উন্নয়ন; দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণে সর্বতো চেষ্টা; লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে খাদ্য ও বাসস্থান দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা; বিশাল মহামারি ঠেকানো ও বিনামূল্যে মহামারির প্রতিষেধক সরবরাহ- এসব কথা বলে হয়তো শেষ করা যাবে না। তবে এ কথাও ঠিক, এত কর্মকাণ্ড করার জন্য যে ধরনের সহযোগিতা তিনি তাঁর সহকর্মীদের কাছে আশা করেছিলেন তা তিনি পাননি। তাঁর যে কোনো কর্মকাণ্ডকে মসিলিপ্ত করার জন্য কিছু মানুষ সর্বদা দু’পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ এক অদ্ভুত দেশ, যেখানে করোনা মহামারির সময়ও কিছু লোক গরিব মানুষের প্রাপ্য আড়াই কেজি চাল চুরি করেছে। তাদের জন্য বরাদ্দ সামান্য টাকা চুরি করে ফেলেছে। সব দায় এসে পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়ে!
শেখ হাসিনার বদৌলতেই এখন বঙ্গোপসাগরের বিরাট অংশ বাংলাদেশের। জেলে ভায়েরা সেখানে তাঁদের ইচ্ছামতো মাছ ধরতে পারেন। সময়ে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণও শেষ হবে। দেশ আমাদের অচিরেই সম্পদ ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে যদি দেশের জনগণ সচেতন থাকে। আমাদের তৃতীয় প্রজন্মের সামনে খুলে যাবে সমৃদ্ধির সিংহদ্বার। যাঁরা স্বাধীনতার জন্ম হতে দেখেছি দু’চোখ ভরে, আমাদের শেষ বয়সে এই দেশ যেন কল্পনার রাজ্যে ধীরে ধীরে পৌঁছে যায়।

সত্যি বলতে আমরা খাদ্য ও বস্ত্র উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের নাগরিক ভাবতে গর্ব বোধ করি। আমাদের সবুজ পাসপোর্টটি হাতে বিশ্বের যে কোনো রাষ্ট্রের ভিসা অফিসের সামনে দাঁড়াতে পারি। আমরা আর তলাহীন ঝুড়ির দেশের নাগরিক নই। সম্পদহীন দেশের তো পৃথিবীর বুকে কোনো মর্যাদা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে আমরা সেই মর্যাদা ফিরে পেয়েছি।

আমাদের সেই প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন আজ। আকাশে-বাতাসে ভৈরবীর সুর। এমদাদ খাঁর সুরবাহার। দুর্গাপূজার আগমনী সুর। সাফ গেমসে বাংলার নারীদের অভূতপূর্ব বিজয়।
আজ আমাদের এই বাংলায় কী নেই! কীসের অভাব? এখনও কড়াইল বাজারে ১০ টাকা করে টকটকে লালশাকের আঁটি। এখনও আমি রোজ বিকেলে দুধভাত খাই। আলু-পেঁপে সিদ্ধ করে খাই। পেয়ারা প্রচুর খাই। পেয়ারা থাকলে আমার তো আপেল খাওয়ার দরকার নেই। কী নেই এই দেশে! এই দেশে আমরা ইচ্ছা করলে সুখে থাকতে পারি; যেখানে ইচ্ছা যেতে পারি। এর আগে বিগত ৫০ বছর ধরে আমরা বড় বড় সংকট পার হয়ে এসেছি। সেই হিসেবে আমরা এই সময়কে অবশ্যই স্বর্ণযুগ বলতে পারি।শেখ হাসিনা [২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭]

এত কথা বলার পরও আমাদের প্রশ্ন থেকে যায়- আমরা সুখি কিনা?

আমার ধারণায়, সুখ ব্যাপারটাই পুরো ব্যক্তিগত এক অনুভূতি। সেদিন বাড়ি ফেরার সময় দেখি একটা গলির মধ্যে বসে একজন রিকশাচালক তার দিনের রোজগার গুনে দেখছে। গোনা শেষে তার মুখে স্বর্গীয় হাসি। আমি বললাম, কী ভাই, রোজগার কেমন? একগাল হেসে বললেন, জবর!

চিন্তা করে দেখলাম, তাঁর মতো এমন দৈনিক রোজগার হলে আমার জীবনে অমানিশা নেমে আসত, কিন্তু রিকশাচালকের জীবনে চন্দ্রিমার আলো! আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের দিয়ে সুখ-দুঃখের বিচার করি। দেশের জনগণ তাদের মেধা, কর্মক্ষমতা, জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে সামনে এগিয়ে গেছে। আর তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নিজস্ব বুদ্ধি, প্রজ্ঞা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা; অকুতোভয় সাহস।

তারপরও কথা থাকে। কিছু লোভী ও অসাধু কর্মকর্তার কারণে; প্রতিদ্বন্দ্বীর কুৎসায় সর্বক্ষণই জর্জরিত হয়েছেন; ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে হয়েছেন অভিষিক্ত। তবু দমে যাননি। সর্বদাই সাহসী ও অকুতোভয় হয়ে এগিয়ে গেছেন সামনে। এমনকি দেশের প্রচলিত আইনেই বঙ্গবন্ধু ও চার নেতার খুনিদের সাজা দিয়েছেন।

সেদিন পুলিশ বাহিনীর এক মহিলা এসপির সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হওয়ার পর তাঁর ইউনিফর্মের দিকে তাকিয়ে যখন বললাম, মা, আপনার এই কাজ করতে ভয় লাগে না? তিনি অনাবিল হেসে বললেন, না। কেন ভয় লাগবে? আমি তো বিদেশের মিশনেও গিয়েছি এবং সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে এসেছি। আমার কাজে এ পর্যন্ত কেউ তো খুঁত ধরতে পারেনি। তা ছাড়া যখনই কোনো সংকট এসেছে জীবনে; আমি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করেছি। তাঁর সাহসিকতাকে স্মরণ করেছি।

আমাদের প্রধানমন্ত্রীর চলার পথ একাকী ও নির্জন। এখানে কেউ তাঁর সত্যিকারের সঙ্গী নয়। মাত্র দু’চারজন হাতেগোনা ছাড়া প্রায় প্রত্যেকেই তাঁর কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা করেন এবং সেটা তিনি দিতে না পারলে তাঁর কুৎসায় সরব হয়ে ওঠেন। প্রকৃত দেশপ্রেম একজন রিকশাচালকের কাছ থেকে মানুষ পেতে পারে; একজন সাধারণ দোকানদারের কাছে পেতে পারে। কিন্তু একজন শিক্ষিত আমলার কাছে দেশপ্রেমের সংজ্ঞা সম্পূর্ণ বিপরীত।
এত কিছু চ্যালেঞ্জ করেই আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আজ সামনে এগিয়ে চলা।

সামনে বিপদ আছে, সন্দেহ নেই। আছে লোভ ও রিরংসার হানাহানি। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর মনের ভাব কারও অগোচর নেই। আর সেটা হলো- সমুদ্রে পেতেছি শয্যা, শিশিরে কি ভয়!
জয় হোক আমাদের প্রধানমন্ত্রীর। জয় হোক শেখ হাসিনার।
জয় হোক শুভ জন্মদিন।

আনোয়ারা সৈয়দ হক :কথাসাহিত্যিক

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.