আনুশকা হত্যার ডিএনএ রিপোর্টে প্রমাণ মিলেছে ধর্ষণ ও ফরেন বডির

রাজধানীর মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ছাত্রী আনুশকা নূর আমিনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এমনকি তার শরীরে ‘ফরেন বডি’ ব্যবহারের আলামতও মিলেছে। চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে ডিএনএ রিপোর্টে। শিগগির এ মামলায় চার্জশিট দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

প্রসঙ্গত, আনুশকা নূর আমিন রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষাথী ছিলেন। তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় গত ৭ জানুয়ারি। ওইদিন দুপুরে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলাবাগান থানায় ফোন করে জানায়, এক তরুণ এক কিশোরীকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এনেছেন।

কিশোরীর শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছে। কলাবাগান থানা পুলিশ আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল গিয়ে ইফতেখার ফারদিন দিহান নামে ওই তরুণকে আটক করে। খবর পেয়ে তার তিন বন্ধু হাসপাতালে গেলে পুলিশ তাদেরও আটক করে। এর আগে আনুশকার মাকে দিহান ফোন করে জানান, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে তার মেয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। মূলত ইফতেখার ফারদিন দিহান ছিল আনুশকার বন্ধু। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে সে কারাগারে আছে।

মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) আহসান হাবিব পলাশ বুধবার বলেন, ‘মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। তবে তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ হবে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হতে পারে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তবে কার বিরুদ্ধে কতটুকু অভিযোগ প্রমাণ হচ্ছে- তা এখনই বলা যাচ্ছে না। আরও কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে পরবর্তীতে বলা যাবে।’

সূত্র জানায়, আনুশকার ডিএনএ রিপোর্ট নিয়ে কাজ করার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ছিলেন ডা. সোহেল মাহমুদ। বর্তমানে তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান হিসাবে কর্মরত।

আনুশকার রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে বুধবার তিনি বলেন, ‘ডিএনএ রিপোর্টটি ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমরা ধর্ষণের আলামত পেয়েছি। পাশাপাশি ফরেন বডি ইনট্রোডাকশানও পাওয়া গেছে।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাকসুদ এই রিপোর্ট প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেন।

পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘ডিএনএ রিপোর্টটি আমরা পেয়েছি। তবে এই মামলার বাদী আনুশকার মা শুরু থেকে যেসব মতামত ও আপত্তি দিয়েছেন সে বিষয়গুলো আমরা গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করছি। আইন এবং তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সেটি যথাযথভাবে নিষ্পত্তি হবে। সেক্ষেত্রে আনুশকার মায়ের বক্তব্য অবশ্যই আমলে নেওয়া হবে। এছাড়া এ ঘটনায় যে বা যারাই প্রকৃত অপরাধী তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। অবশ্যই নির্দোষ কাউকে যুক্ত করা হবে না।’

রাজধানীর কলাবাগান থানায় করা আনুশকা হত্যা মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আছাদুজ্জামান। সেই সময়ই ময়নাতদন্তে বিকৃত যৌনাচার আর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আনুশকার মৃত্যুর বিষয়টি বারবার সামনে আসে। উঠে আসে ‘ফরেন বডি’ ব্যবহারের বিষয়টিও। পরবর্তীতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) মাধ্যমে তদন্তের ইচ্ছা পোষণ করে বাদীপক্ষ আবেদন করে। বিকৃত যৌনাচারের ক্ষেত্রে ফরেন বডি ব্যবহারের উদাহরণ রয়েছে। যা আইনবিরুদ্ধ এবং এটি ব্যবহারে মানবদেহের স্পর্শকাতর স্থানে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

এজাহারে যা ছিল : গত ৭ জানুয়ারি রাতে কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আনুশকার বাবা মো. আল আমিন মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে তিনি ও তার স্ত্রী কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। বেলা সাড়ে ১১টায় আনুশকা কোচিংয়ের পেপার আনতে বাইরে যাচ্ছে বলে ফোনে তার মাকে জানায়। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে আনুশকা বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এজাহারে বলা হয়, দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে দিহান আনুশকার মাকে ফোন দেন।

তিনি ফোনে জানান, আনুশকা তার বাসায় গিয়েছিল। সেখানে অচেতন হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। এ কথা শুনে আনুশকার মা ১টা ৫২ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে তিনি কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন আনুশকাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

আনুশকার বাবা এজাহারে আরও বলেন, তারা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছেন যে দিহান তার মেয়েকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে দুপুর ১২টার দিকে বাসায় ডেকে নিয়ে যান। পরে দিহান ফাঁকা বাসায় আনুশকাকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে আনুশকা অচেতন হয়ে পড়ে। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দিহান তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.