ট্রলের জবাবে রিয়াজের ফেসবুক পোস্ট

চট্টগ্রামের রাস্তাঘাটকে ইউরোপের সঙ্গে তুলনা করে বক্তব্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রলের শিকার হয়েছেন চিত্রনায়ক রিয়াজ।

২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমের পক্ষে প্রচারে যান রিয়াজ।

সেদিন রিয়াজ চট্টগ্রামের সড়ক দেখিয়ে বলেছিলেন– এটি বাংলাদেশের নয়, ইউরোপের কোনো রাস্তা।

এ বক্তব্যের পর পরই তাকে নিয়ে নানা সমালোচনা, ট্রল ও মিমে মেতে ওঠেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।

বিমানে উড়ে গিয়ে চট্টগ্রামের রাস্তার উন্নয়নের কথা কী করে বলছেন রিয়াজ- সে প্রশ্ন তোলেন নেটিজেনরা। এর পর কিছু অনলাইন গণমাধ্যমেও রিয়াজের বক্তব্য নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করা হয়।

যদিও রিয়াজের দাবি– তার এই বক্তব্য ফেসবুক ও কিছু অনলাইন পোর্টাল বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভাইরাল করা হয়েছে। যে কারণে ট্রল ও অশালীন ভাষায় আক্রমণের শিকার হয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় হতবাক ও হতাশ হয়েছেন রিয়াজ।

তার মতে, যারা একজন রাজাকারকে চাঁদে দেখতে পায়, তারাই ফেসবুকে এই অশ্লীল আক্রমণ করছেন।

২৬ জানুয়ারি এ বিষয়ে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দেন রিয়াজ। সেখানে তিনি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের পুরোটাকে ইউরোপের রাস্তা বলেননি। মেরিন ড্রাইভটিকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছিলেন।

রিয়াজের সেই স্ট্যাটাস পাঠকের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো–

‘গত রোববার আমি আমার কিছু সতীর্থ তারকার সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী ভাইয়ের নির্বাচনী প্রচারণাতে অংশ নিতে যাই। এয়ারপোর্ট থেকে নেমে মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে আসার সময় মনে হয়, এত বাংলাদেশের নয়; ইউরোপের কোনো রাস্তা। অত্যন্ত হর্ষ ও গর্ববোধ করি এ নিয়ে। এর পর সারাদিন ধরে চলে উৎসবমুখর এবং স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচনী প্রচারণা। আর সবসময়ের মতোই চট্টগ্রামের মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হই। চট্টগ্রামের মানুষের হৃদয় অনেক বড় ও তারা মানুষকে অনেক সম্মান করেন। সারাদিনের প্রচারণা শেষে ঢাকা এসে আমি ক্লান্ত হয়ে দুদিন বিশ্রাম নিই। বিশ্রাম শেষে ফেসবুক তথা সামাজিক গণমাধ্যমে এসে দেখি তুঘলকী কাণ্ড!’

‘কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালে বলা হয়েছে, আমি নাকি বলেছি– আমার কাছে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার ‘পুরো রাস্তাটাই’ ইউরোপের রাস্তা বলে মনে হয়েছে। ভুঁইফোড় অনলাইন মিডিয়াগুলোর প্রধান কাজই মানুষের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে কিছু ক্লিক কামানো– এটিই তাদের রুজিরুটি। প্রথমত আমি প্রশ্ন করতে চাই– আমার এই বক্তব্যের ভিডিও সবখানে আছে, আমাকে দেখাতে পারবেন সেই ভিডিওতে আমি কোথায় বলেছি যে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে ‘পুরো রাস্তাটাই’ ইউরোপের রাস্তা বলে মনে হয়েছে?’

রিয়াজ আরও লেখেন, ‘আমি একটি নির্বাচনী প্রচারণার মাঝখানে ছিলাম, প্রচণ্ড ব্যস্ত ছিলাম, একটি উৎসবমুখর পরিবেশের উত্তেজনাতে ছিলাম। সেখানে একটি ঝটিকা স্পট ইন্টারভিউতে তো আমার এত ডিটেইলস বলা সম্ভব নয় যে- এয়ারপোর্ট থেকে নেমে মূল শহরে আমি চট্টগ্রাম মেরিন ড্রাইভ রোড করে আসি এবং সেই রাস্তাটিকে আমার উন্নত বিশ্বের রাস্তার মতোই মনে হয়। আপনাদের এই ধরনের কাজে আমি আসলেই হতবাক। আমার কিছুই বলার নেই। কিন্তু এই সুযোগটিকে কাজে লাগায় একটি বিশেষ মহল। তারা আমার নিউজটিকে নিয়ে শুরু করে অশালীন এবং অসভ্য ভাষার আক্রমণ। একটি সংঘবদ্ধ চক্র এটিকে ভাইরালও করে। অন্য কোনো সময় হলে কিংবা অন্য কেউ হলে আমার আসলেই হয়তো অনেক রাগ উঠত। কিন্তু আমার এই মুহূর্তে খুব হাসি পাচ্ছে। হাসি পাচ্ছে কারণ– যারা এই অশ্লীল আক্রমণগুলো করছেন, তাদের সিংহভাগই হলো সেই কুচক্রী মহলের লোক, যারা নাকি একজন রাজাকারকে চাঁদে দেখতে পায়। এরা রাজাকারকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ান, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় থেকে আজ অবধি এরা বাংলার সহজ-সরল মানুষগুলোকে বিভ্রান্তি এবং গুমরাহির মাঝে ফেলে দিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে চলেছেন। দেশকে প্রতিনিয়ত পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিটি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলোকে এরা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছেন। যারা দেশের এতবড় সর্বনাশে লিপ্ত, তাদের গুজবের ব্রহ্মাস্ত্রের কাছে আমি রিয়াজ এক তুচ্ছ বলি। তাই সত্যিকার অর্থে আমি চিন্তিত আমাকে নিয়ে নই, দেশের সরল মানুষগুলোকে নিয়ে।’

এর পর রিয়াজ প্রশ্ন ছুড়েন, ‘আমি নেটিজেনদের কাছেও একটি প্রশ্ন রাখতে চাই। বাংলাদেশকে কি আপনারা এখনও এতই ফেলনা মনে করেন? আপনাদের কি মনে হয় বাংলাদেশে আসলেই এমন কোনো সড়ক কিংবা স্থাপনা নেই, যা উন্নত বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে? নিজ দেশের প্রতি আপনাদের কি এতটুকুও আস্থা নেই? এই আপনাদের দেশপ্রেম কি এতই নড়বড়ে যে, কিছু কুচক্রী গুজববাজের কথা শুনে আপনারা বিভ্রান্ত হবেন? না ভাই, বাংলাদেশ এখন আর সেই তলাবিহীন ঝুড়ি নেই।

রিয়াজের অনুরোধ– ‘এসব গুজববাজের কথায় কান দেবেন না। এরা দেশের শত্রু, এরা আপনার শত্রু। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দিক, মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রিয় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে রক্ষা করুক এসব গুজববাজের হাত থেকে। আর উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ এভাবেই এগিয়ে যাক বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। জয় বাংলা! জয় বঙ্গবন্ধু!’

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.