গ্লোব বায়োটেকের করোনা ভ্যাক্সিন, ফেসবুকে শুভেচ্ছার বন্যা

নিজ দেশের একটি কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক করোনাভাইরাসের ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করেছে, এ খবর জেনে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চলছে আনন্দের বন্যা। অনেকেই এই সাফল্যকে গ্লোবের নয়, বরং দেশের সাফল্য হিসেবে দেখছেন।

আদনান রহমান যেমন লিখেছেনঃ

“বাংলাদেশের কেউ একজন বা কোন একটা প্রতিষ্ঠান জীবন রক্ষাকারী ভ্যাক্সিন তৈরির চেষ্টা করছে। শতভাগ সফল হবে কিনা জানি না, হয়তো শতভাগ ব্যর্থ হবে। কিন্তু ব্যাপারটা দারুণ, অসাধারণ। এই দেশে কেউ কেউ গবেষণা করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। এই সাহসী মানুষগুলোকে উৎসাহ দিন। একশটা বিসিএস ক্যাডারের চেয়েও তাদের কাজটা আমার কাছে বড়।”

আবার অনেকের মতোই ‘মারুফ আহমেদ অমি’ নামে একজন নিজের ক্ষোভ ঝেড়েছেন অন্যভাবে। তার দেয়া পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ

“কি হলো আপনার মধ্যে উচ্ছাস দেখছিনা যে, আপনার আইডিতে অভিনন্দন অভিনন্দন ও দেখছিনা, টিভি নিউজগুলোর এতো বেশি হাইলাইট ও দেখছিনা, কারণ কি? আপনার বা আপনাদের কি মনে হয় গ্লোব বায়োটিকের এটি বড় অর্জন নয়?

দেশের একটি প্রতিষ্ঠান করোনা’র ভ্যাক্সিন আবিষ্কারে প্রাথমিক সাফল্যের ঘোষণা দিয়েছে,তা কম কিছু? তাদের উৎসাহ দিন, টেনে নিন, কিটের মতো দুরে ঠেলে দেবেন না!

ক্রিকেটে জিম্বাবুয়েকে হারালেও তো আমাদের মাঝে সে-কি আনন্দ, উচ্ছাস! জয়ের বাকি আর স্ট্যাটাস দেয়া বাকি! যিনি খেলা বুঝেন না তিনিও একটা অভিনন্দন দেন, যিনি খেলা দেখেন না তিনিও একটা অভিনন্দন দেন।

অথচ, দেশের একটি প্রতিষ্ঠানের এমন প্রাথমিক অর্জনে আপনি কৃপণতা দেখাচ্ছেন, ট্রল করছেন, হাসছেন আর হাসাচ্ছেন। অন্যদিকে অন্য ঔষধ কোম্পানীগুলোও বিষয়টা ভালোভাবে নিতে পেরেছে বলে মনে হয়না, কেউ কেউ হিংসায় জ্বলছে। বড় কোম্পানীগুলোর কথা হচ্ছে এদেশে ব্যাবসা আমরাই করবো, আমরাই যা করার করবো। এই ফাঁকে গ্লোব বায়োটেক করলোটা কি!

আর দেশের এমন একটা অর্জনে, সংবাদমাধ্যমগুলো এমনভাবে সংবাদটা প্রকাশ করছে যেন এটা কোন বিষয়ই না! তাদের কাছে চীনের আবিস্কার আর আমেরিকার আবিষ্কারই বিষয়!

মিডিয়াপাড়ারও এমন একটা ভাব যেন এটা মিথ্যা দাবি, তারা মানতেই খুব একটা রাজি নয়,তাদের বিশ্বাসই হয় না! অথচ, আমাদের উচিত তাদের উৎসাহ দেয়া। তাতে গ্লোব ব্যর্থ হলেও অন্যরা চেষ্টা করতে উৎসাহ পাবে। বিশ্ব জানবে, আমরাও চেষ্টা করেছি। আমরাও পারি।

আমি বলছি না, গ্লোব বায়োটেক’র এটি চূড়ান্ত সাফল্য। কেননা আবিষ্কারটা এখনো প্রথমিক পর্যায়ে, এখনো অনেক পথ বাকি। তবুও এটা আমার কাছে অনেক বড় অর্জন। যে অর্জনের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান গবেষণা কর্মকর্তার চোখে পানি এসে যায় সে অর্জন আমাকে আশা জাগায়, সে অর্জনে আমি তাদের স্যালিউট জানাই।

নাদিম মাহমুদ শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেনঃ

“বাংলাদেশে অন্তত আড়াইশোর বেশি ঔষধ কোম্পানি রয়েছে, পঞ্চাশটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, এতো কিছুর পরও করোনাভাইরাস ঠেকাতে তেমন কিছু একটা তাদের কাছে পায়নি বাংলাদেশ। ঔষধ কোম্পানিগুলো প্রতি বছর তাদের ডাক্তারদের চেম্বারে ঘুরে ঘুরে যেসব উপহার দেন, সেই অর্থের শতভাগের একভাগও রিসার্স আন্ড ডেভলাপমেন্টে খরচ করে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ নিশ্চয় অমূলক হবে না।

তবে এতো কিছু নাই নাই এর মধ্যে অন্তত একটি ঔষধ কোম্পানি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এগিয়ে আসার যে সাহস দেখিয়েছে সেটিই বা কম কিসের?

এতোদিন তো আমরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ChAdOx1-S ভ্যাকসিনের শুরু থেকে উল্লাস করে বেড়ালাম, মনে হলো, এই ভ্যাকসিন বুঝে আমার দেশের জন্য তৈরি হচ্ছে, অথচ আজ দেশেরই গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের কথা যখন ঘোষণা করলো, তখন আমরা নিশ্চুপ হয়ে গেলাম।

অদ্ভুত জাতি আমরা। এই জাতি বিসিএস ক্যাডারদের অভিনন্দন জানিয়ে বেড়ায়, নেতাদের পদ-পদবীতে শুভেচ্ছার বন্যা এনে দেয়, সেই জাতি আজ গ্লোবের ভ্যাকসিনের কথা শুনে চোখ কপালে তুলেছে।

বলি কি, বিশ্বে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৪৯ টি ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট ডব্লিউএইচও যে লিস্ট করেছে, সেখানে ১৫০ তম ভ্যাকসিনের তালিকায় যদি বাংলাদেশের নাম ঢুকে তাতে ক্ষতি কি?

ভ্যাকসিনটি সফল হবে না, আদৌও সম্ভব কি না, তা নিয়ে না হয় পরে প্রশ্ন করা যাবে, টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে কথা হবে। তবে আপাতত এই ভ্যাকসিনের পিছনে লেগে থাকা মানুষদের অন্তত শুভেচ্ছা জানাই।”

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.