কথাসাহিত্যিক মকবুলা মনজুরের মৃত্যু

কথাসাহিত্যিক মকবুলা মনজুর আর নেই। শুক্রবার বিকালে রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)।

মকবুলা মনজুর দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই মেয়ে ও দুই ছেলেসহ বহু স্বজন-অনুরাগী রেখে গেছেন।

শুক্রবার রাতে মকবুলা মনজুরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের সভাপতি দিলারা মেসবাহ বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।
শুক্রবার উত্তরায় নিজ বাসভবনেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মকবুলা মনজুর ১৯৩৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার মুগবেলাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
তার বাবার নাম মিজানুর রহমান ও মায়ের নাম মাহমুদা খাতুন। বাবা মিজানুর রহমান লেখালেখি করতেন। ১৯৫২ সালে তিনি টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক (এসএসসি) পাস করেন।

বাংলাভাষা আন্দোলন চলাকালীন সেই সময়ে তিনি স্কুলের হোস্টেলে থাকতেন। স্কুলের গেট ভেঙে মিছিলে যোগ দেয়ার পর ফিরে এলে তিনিসহ বাকি মেয়েদের স্কুলে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ১৯৫৪ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন এবং ১৯৫৮ সালে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।
দীর্ঘদিন পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

তৎকালীন মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকে (বর্তমান রূপালী ব্যাংক) অফিসার হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়া।
তাই প্রায় অর্ধেক বেতনে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন হলিক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে তিনি ইউনিভার্সিটি উইমেন্স কলেজ ও সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি প্রায় ২৫ বছর সাপ্তাহিক ‘বেগম’ পত্রিকার ফিচার সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া দৈনিক আজাদ পত্রিকার ফিচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মকবুলার সাহিত্য চর্চা শুরু হয় আট বছর থেকে। তখন তিনি ছড়া লিখতেন।

১৮ বছর থেকে তিনি গদ্য সাহিত্যে অনুরাগী হন। তিনি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা সাহিত্যে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট, নারীবাদী চেতনা নিয়ে তার কলম ধরেন।

তিনি তার কালের মন্দিরা উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ওপর অত্যাচারের কাহিনী তুলে ধরেন। মকবুলা মনজুর রচিত উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- কালের মন্দিরা, আর এক জীবন, অবসন্ন গান, আত্মজা ও আমরা, প্রেম এক সোনালী নদী, বাউল বাতাস, ছায়াপথে দেখা, সায়াহ্ন যূথিকা, নক্ষত্রের তলে প্রমুখ।

সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার শ্রেষ্ঠগ্রন্থ পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কারসহ বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.