×

  • নিউজ ডেস্ক

    প্রকাশিত : তারিখ - ২০২৫-০৩-২৪, সময় - ০৭:১৪:২৫

নবীজী (স) এবং সাহাবাদের জীবনে ঈদ- একটি বিশ্লেষণ

প্রতিবছর মুসলমানরা ঈদ উদযাপন করে, যা মূলত ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা হিসেবে পরিচিত। আধুনিক সময়ে ঈদ উদযাপন অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। তবে, যদি আমরা ঈদ উৎসবের প্রকৃত তাৎপর্য বুঝতে চাই, তাহলে আমাদের নবীজী (স) এবং সাহাবাদের জীবনকে অনুসরণ করা প্রয়োজন। তারা কীভাবে ঈদ উদযাপন করেছেন এবং কীভাবে ঈদের প্রকৃত উদ্দেশ্য তারা আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, তা আমাদের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার বিষয়।

ঈদের প্রচলন

মদিনায় নবীজী (স) যখন আগমন করেন, তখন তিনি দেখতে পান যে সেখানকার মানুষ দুটি বিশেষ দিনকে ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করে, যা মূলত জাহেলী যুগের আমোদ-ফুর্তির দিন ছিল। এই দুই দিন ছিল খেলাধুলা ও আনন্দের দিন। নবীজী (স) তাদের জিজ্ঞেস করেন, “এই দু’দিনের কি তাৎপর্য?” তারা জানায়, “আমরা জাহেলী যুগে এই দু’দিনে আনন্দ করতাম।” তখন নবীজী (স) বলেন, “আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তোমাদের এর পরিবর্তে আরও উত্তম দুটি দিন দিয়েছেন, তা হলো ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা।” [সুনান আবু দাউদ : ১১৩৪]

এখানে ঈদের প্রকৃত উদযাপন কেবল আমোদ-ফুর্তি নয়, বরং আল্লাহর শুকরিয়া, জিকির, এবং পরিমিত আনন্দের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়।

ঈদের নামাজ

নবীজী (স) ঈদের দিন দিনে দু’রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তিনি অন্য কোন নামাজ ঈদের আগে বা পরে আদায় করতেন না। [সহীহ বুখারি : ৯৮৯] এছাড়া, নবীজী (স) ঈদের জামাতে শুধু পুরুষদেরই অংশগ্রহণের জন্য বলেননি, বরং মহিলাদেরও ঈদগাহে অংশগ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। উম্মে আতিয়া (রা) বলেন, “রসুলুল্লাহ (স) আমাদেরকে আদেশ করেছিলেন যে, আমরা যেন মহিলাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজের জন্য বের করি।” [সহীহ মুসলিম : ২০৯৩]

ঈদের দিন গোসল করা

ঈদের দিন গোসল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি নবীজী (স) এর সুন্নাত ছিল। ইবনে উমার (রা) বলেন, “নবীজী (স) ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন।” [সুনান বায়হাকী : ৫৯২০]

পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া

নবীজী (স) সুন্নত হিসেবে ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যেতেন। এটি এক ধরনের সাদাসিধা এবং তার মানবিক অবস্থানকে প্রকাশ করে। হযরত আলী (রা) বলেন, “ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া সুন্নাত।” [সুনান আততিরমিযী : ৫৩৩]

খাবার গ্রহণ

ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজের পূর্বে খাবার গ্রহণ করা সুন্নাত, তবে ঈদুল আজহার দিন নামাজের পরে কুরবানির গোশত খাওয়া সুন্নাত। বুরাইদা (রা) বলেন, “নবীজী (স) ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন, কিন্তু ঈদুল আজহার দিনে নামাজের আগে কিছু খেতেন না।” [সুনান আততিরমীযি : ৫৪৫]

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়

ঈদের দিন পারস্পরিক শুভেচ্ছা জানানো শরিয়ত অনুমোদিত একটি কাজ। সাহাবাগণ ঈদের দিন একে অপরকে “তাকাববালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা” বলতেন, যার অর্থ, “আল্লাহ আমাদের এবং আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুন।”

তাকবির পাঠ

ঈদের চাঁদ দেখার পর থেকেই তাকবির পাঠ করা শুরু করা উচিত। এটি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের এক উপায়। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) বলেন, “নবীজী (স) ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছানো পর্যন্ত তাকবির পাঠ করতেন।” [মুসতাদরাক : ১১০৬]

নিউজটি শেয়ার করুন



এ জাতীয় আরো খবর..
ইউটিউবে আমরা...
ফেসবুকে আমরা...