‘সাকিব কাণ্ডে’ বিসিবি বিব্রত

২৯শে অক্টোবর আইসিসির দেয়া এক বছরের নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হন সাকিব আল হাসান। তারপর থেকে গোটা বাংলাদেশ তার দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিল। যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত ৫ই নভেম্বর গভীর রাতে দেশে ফেরেন তিনি। তবে দেশে ফিরেই জড়িয়ে পড়েছেন নতুন বিতর্কে। বিশ্বজুড়ে চলছে করোনা মহামারি। যে কারণে কেউ বিদেশ থেকে ফিরলে সরকারের নিয়ম অনুসারে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় জনগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য নিয়ম শিথিলও করে। তবে সেই ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে নেগেটিভ হলে তবেই তার বাইরে যাওয়ার নিয়ম।

কিন্তু সাকিব সরকারের কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে যোগ দিয়েছেন একটি সুপার শপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। সামাজিক দূরত্বের বালাইও ছিল না সেখানে। তার সে ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। প্রশ্ন ওঠে, সাকিবের জন্য বাংলাদেশের কোয়ারেন্টিন নীতি ভিন্ন নাকি! তার এমন কাণ্ডে আরো একবার বিব্রত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এ নিয়ে বিসিবির কোনো কর্তাব্যক্তিই মুখ খুলতেই রাজি নয়। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান বলেন, ‘অবশ্য সরকারের কোয়ারেন্টিন নীতি মানা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। তবে এটি তার (সাকিব) একান্ত ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান ছিল। তাই আমরা কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চাই না।’

বিসিবির মিডিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়। তবে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি বাংলাদেশ সরকারের কোয়ারেন্টিন ইস্যুতে আইন আছে। একটি হলো ১৪ দিনের। আরেকটি বিশেষ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ে আবেদন করে কোভিড-১৯ পরীক্ষা দিয়ে তা নেগেটিভ হলেই কোয়ারেন্টিন শিথিল হয়। আমি জানি না সে (সাকিব) কোনো নিয়ম অনুসরণ করেছে কিনা। এটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার, সাকিব দেশে ফিরলেও এখনো বিসিবির সঙ্গে যুক্ত হয়নি। তাই এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই।’ বলার অপেক্ষা রাখে না, সাকিব কোনো নিয়ম মানেননি কোয়ারেন্টিন ও কোভিড-১৯ পরীক্ষার বিষয়ে। কারণ তিনি দেশে ফিরে এসে কোনো ধরনের টেস্ট করার সুযোগ পাননি। এমনকি বিসিবি তার কোয়ারেন্টিন শিথিল করতে সরকারকে কোনো চিঠিও দেয়নি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রশাসন নাসিমা সুলতানার বক্তব্যেও বিষিয়টি স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘কোনো বিদেশ ফেরত যাত্রী যদি করোনা নেগেটিভের মেডিকেল সার্টিফিকেট সঙ্গে নিয়ে আসেন তাহলে তাকে নিজ বাসায় অথবা নিজের তত্তাবধানে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন পালন করতে হবে।’

ক্যারিয়ার জুড়েই সাকিব আল হাসান আছেন নানা আলোচনা-সমালোচনায়। কখনো দর্শক পিটিয়ে নিষিদ্ধ হয়েছেন। আবার কখনো বিসিবির সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে। সবশেষ গেল বছর ক্রিকেট জুয়াড়িদের প্রস্তাব গোপন করায় আইসিসি তাকে দুই বছর নিষিদ্ধ করে। যে কারণে এক বছর তার কোনো ধরনের ক্রিকেট তিনি খেলতে পারেননি। আরেক বছর ছিল স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। ২৯শে নভেম্বর থেকে তার ক্রিকেট খেলতে কোনো বাধা নেই। যে কারণে তিনি দেশে যুকরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে এই মাসের শেষ সপ্তাহে টি-টোয়েন্টি লীগে তার খেলার কথা। তার আগে অবশ্যই সাকিবকে ফিটনেস পরীক্ষা দিতে হবে বলে জানিয়েছে বিসিবি। ফিটনেস টেস্টের জন্য বিসিবি যে ১১৩ জনের নাম ঘোষণা করেছে সেখানে সাকিবও আছেন। ৯ই নভেম্বর বিসিবিতে তার ফিটনেস টেস্ট দিতে আসার কথা। তবে জানা গেছে কোভিড-১৯ পরীক্ষা দিয়ে তিনি হয়তো একদিন পরেও ফিটনেস পরীক্ষা দিতে পারেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.