রুদ্ধশ্বাস এল ক্লাসিকো, দুর্দান্ত জয় রিয়ালের
২৪৫তম এল ক্লাসিকোয় নামার আগে খেলা শেষ লীগ ম্যাচে হেরেছিল দু’দলই। ইতিহাসের প্রথম দর্শকশূন্য এল ক্লাসিকোয় বার্সেলোনাকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। রিয়ালের হয়ে গোল করেন ফেদে ভালভার্দে, সার্জিও রামোস ও লুকা মদ্রিচ। বার্সেলোনার গোলদাতা আনসু ফাতি। বার্সেলোনার মুখোমুখি হওয়ার আগে টানা দুই ম্যাচ হেরেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় নিয়ে ফিরলো লস ব্লাঙ্কোস। কোচ হিসেবে অভিষেক এল ক্লাসিকোয় হার দেখলেন বার্সা কোচ রোনাল্ড কোম্যান। আগের ২৪৪ বারের দেখায় সমান ৯৬টি করে জয় ছিল দু’দলের। শনিবারের জয়ে এগিয়ে গেল রিয়াল মাদ্রিদ।
এ জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এলো রিয়াল মাদ্রিদ।
৬ ম্যাচে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের সংগ্রহ ১৩ পয়েন্ট। এক ম্যাচ কম খেলা দশম স্থানে থাকা বার্সেলোনার পয়েন্ট ৭।
এল ক্লাসিকোর সর্বোচ্চ গোলদাতা (৪২ ম্যাচে ২৬ গোল) লিওনেল মেসিকে বোতলবন্দি রাখায় সফল রিয়াল মদ্রিদ। টানা ছয় এল ক্লাসিকোয় গোলহীন থাকলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
শনিবার বার্সেলোনার ঘরের মাঠ ন্যু ক্যাম্পে শুরুর কয়েক মিনিট খেলার গতি ছিল ধীর। হঠাৎই প্রতি আক্রমণ থেকে লিড নেয় রিয়াল মাদ্রিদ। পঞ্চম মিনিটের করিম বেনজেমার দারুণ এক পাস থেকে ডান পায়ের কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন ফেদে ভালভার্দে। জিনেদিন জিদানের দলের লিড টিকলো তিন মিনিট। অষ্টম মিনিটে লিওনেল মেসির মাঝমাঠের ডানপ্রান্ত থেকে বাড়ানো বল ধরে জর্ডি আলবা দ্রুত গতিতে রিয়াল ডিবক্সে ঢুকে ক্যাটব্যাক বাড়ান আনসু ফাতির উদ্দেশ্যে। সার্জিও রামোসের বাধা এড়িয়ে কাছ থেকে জালে বল জড়ান আনসু ফাতি। এল ক্লাসিকো অভিষেকে গোল করেন ১৭ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। এল ক্লাসিকোয় বার্সার হয়ে ৪০০তম গোল করলেন ফাতি। সবচেয়ে কম বয়সী (১৭ বছর ৩৫৯ দিন) হিসেবে এল ক্লাসিকোয় গোল করার কৃতিত্ব দেখালেন তিনি। এর আগের রেকর্ডটি ছিল রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়াস জুনিয়রের। ১৯ বছর ২৩৩ দিন বয়সে গোল করেছিলেন তিনি।
১৯তম মিনিটে মেসি দ্রুতগতির শট লক্ষ্যে থাকলেও সহজেই গ্রিপে নেন রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। ২৪তম মিনিটে মেসির দারুণ এক প্রচেষ্টা রুখে দেন কোর্তোয়া। ফাতির বাড়ানো চিপ বুক দিয়ে নামিয়ে সার্জিও রামোসকে কাটান মেসি। কাছ থেকে নেয়া মেসির শট নিলে দারুণভাবে রুখে দেন রিয়াল গোলরক্ষক। ৩০ সেকেন্ড পর দারুণ এক প্রতি আক্রমণ থেকে গোলের সুযোগ পায় রিয়াল। নেতো বাঁচিয়ে দেন বার্সাকে। মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো টনি ক্রুসের পাস থেকে বেনজেমার প্লেসিং শট ঠেকান বার্সা গোলরক্ষক নেতো।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই রিয়াল রক্ষণে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে বার্সেলোনা। দশ মিনিটের মধ্যে দারুণ দুটি সুযোগও পায় কোম্যানের দল। ৫১ মিনিটে ফাতির ডান পায়ে নেয়া কোণাকুণি শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তিন মিনিট পর আনসু ফাতির ডানপ্রান্ত থেকে বাড়ানো ক্রসে ফিলিপে কুটিনহো মাথা ছোঁয়ালেও লক্ষ্যে থাকেনি।
ধারার বিপরীতে লিড নেয় রিয়াল মাদ্রিদ। ৫৯ মিনিটে কর্ণার থেকে হেড নেয়ার সময় রামোসের জার্সি টেনে ধরেন বার্সার ফরাসি ডিফেন্ডার ক্লেমোঁ লংলে। ভিএআর দেখে পেনাল্টি দেন রেফারি। ৬৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন রামোস।
৭৬ মিনিটে মেসির ফ্রিকিক কোনমতে কর্ণারের বিনিময়ে রক্ষা করে রিয়াল ডিফেন্ডাররা। ৮১ মিনিটে একসঙ্গে তিন পরিবর্তন আনেন বার্সা কোচ রোনাল্ড কোম্যান। আক্রমণাত্মক বার্সার রক্ষণে ৮৫ মিনিটে হানা দেয় রিয়াল। টানা দুইবার নিশ্চিত দুটি গোল অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ফেরান নেতো। প্রথমে লুকাস ভাস্কেজ এবং পরে টনি ক্রুসকে হতাশ করেন নেতো। এক মিনিট পর রামোসের শটও দুর্দান্তভাবে ফেরান বার্সা গোলরক্ষক।
৯০ মিনিটে বার্সাকে হতাশায় ডোবান লুকা মদ্রিচ। বার্সার রক্ষণ বল নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। গোলরক্ষক নেতো পোস্ট ছেড়ে এগিয়ে এসেও বল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি। ফাঁকায় থাকা মদ্রিচ গোল করতে ভুল করেননি।
লা লিগায় আগের দুইবারের দেখায় একটি ড্র ও অপরটিতে জয় পায় রিয়াল মাদ্রিদ। কোচ হিসেবে ন্যু ক্যাম্পে টানা ছয় ম্যাচ অপরাজিত জিদান (৩ জয় ও ৩ ড্র)। বার্সেলোনার ঘরের মাঠে সাত ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা রিয়ালের সাবেক কোচ মিগুয়েল মুনোজের।