দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় হুমকি ট্রাম্প

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দেখা দিতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাকে।

অন্যদিকে প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক ও কলামিস্ট নোয়াম চমস্কি মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্প কেবল গণতন্ত্রের জন্যই হুমকির প্রতীক নন, গোটা পৃথিবীর জন্যই হুমকির প্রতীক। তার মতে, ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচিত হয়ে যাওয়া হবে ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক মুহূর্ত।’ এর মধ্য দিয়ে জলবায়ু সংকট তৈরি হবে। পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি তৈরি হবে এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের উত্থানের হুমকিও দেখা দেবে।

দ্য কনভারসেশনে প্রকাশিত ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির ইংলিশ অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর হেনরি গেইরক্সের ‘ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনে আমেরিকা কি টিকে থাকতে পারবে?’ শিরোনামের প্রবন্ধে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়। প্রবন্ধটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল।

২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে পারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর একটি। এমনকি এটি হতে পারে একুশ শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী ঘটনাও।

এখানে কে প্রেসিডেন্ট হবেন তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জনগণ কি এরই মধ্যে ক্ষতবিক্ষত গণতন্ত্রের আদর্শ ও প্রতিশ্রুতি বজায় রাখার পক্ষে ভোট দেবেন নাকি আমেরিকান সমাজকে আরও কর্তৃত্ববাদী শাসনের অতল গহ্বরের দিকে ঠেলে দেবেন।

নোয়াম চমস্কির মতো অনেক পণ্ডিত বিশ্বাস করেন, বিজয়ী হলে জলবায়ু সংকট তৈরি, পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের উত্থানের হুমকির মতো মানবতার প্রতি হুমকির বিষয়গুলো সমাধান করতে ট্রাম্প কেবল অস্বীকারই করবেন না; বরং এগুলোকে তিনি আরও তীব্র করে তুলবেন। তবে কেবল ট্রাম্পের দিকে তাকালে রাজনীতির ব্যক্তিকরণ করা হবে এবং ওই পরিস্থিতি থেকে সৃষ্টি সরে যাবে যা প্রথমত ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে সম্ভব করেছে।

১৯৮০-এর দশক থেকে পতনের দিকে যুক্তরাষ্ট্র : যুক্তরাষ্ট্রে ফ্যাসিবাদের উত্থান হঠাৎ করে হয়নি। ১৯৮০-এর দশক থেকেই এর ভিত্তি তৈরি হয়েছে। তখন থেকেই আমেরিকার সমাজে ব্যর্থ রাষ্ট্র হওয়ার উপাদান দেখা যাচ্ছে। কোভিড-১৯ এর মাঝপথে এসে সে উপাদানগুলো দৃশ্যমান হয়েছে মাত্র।

এই উপাদানগুলোর মধ্যে আছে- বড় ধরনের অসমতা, বিস্তৃত বিচ্ছিন্নতাবাদ, নাগরিক সংস্কৃতি ভেঙে পড়া, সামাজিক চুক্তি ধসে যাওয়া, দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতিগত বর্ণবাদ এবং নাগরিক অশিক্ষা বাড়তে থাকার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয়। এসব বিষয় ট্রাম্পের জয়ের পরিস্থিতি তৈরি করে ২০১৬ সালে।

অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য সংকটের পাশাপাশি ট্রাম্প সামাজিক বিভক্তির বীজ বপন করেছেন এবং জাতিগত নিশ্চিহ্নতা ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের পুনরুত্থান ঘটিয়েছেন।

শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের রক্ষক : প্রাউড বয়েজের মতো বর্ণবাদী গ্রুপগুলোর সমালোচনা করতে অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প।

এর মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে শ্বেতাঙ্গ আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী মতবাদের রক্ষক বানিয়েছেন নিজেকে। সাদাদের দুষ্কর্মে সহায়তা দেয়ার জন্য প্রতীক তৈরিতে তিনি সমর্থন দিয়েছেন এবং তাদের পতাকা কেড়ে নেয়ার সমালোচনা করেছেন।

ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যে বর্ণবাদ ও গোঁয়ার্তুমির আকাক্সক্ষা জাগিয়ে তুলেছেন। করোনাকালীর স্বাস্থ্যবিধি না মানার জোয়ার তৈরি করেছেন। এছাড়া দমনপীড়নমূলক নীতি গ্রহণ করেছেন ও আমেরিকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

রুটজার্স ইউনিভার্সিটির স্টিফেন এরিক ব্রোনার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ট্রাম্প প্রথাগত রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক নিয়মনীতিগুলো পায়ে মাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, তিনি আইনের ঊর্ধ্বে এবং ক্ষমতা নেয়ার কারণে তার দায়মুক্তি ঘটে গেছে। এতগুলো রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় সত্ত্বেও ৪০ শতাংশের বেশি মার্কিন জনগণ ট্রাম্পকে সমর্থন করে!

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.