হাসপাতালে ট্রাম্প
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়েছে, তিনি ক্লান্ত। তবে খোশমেজাজে আছেন। পূর্ব সতর্কতা হিসেবে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের করোনা পজেটিভ ধরা পড়ার পর ট্রাম্পকে পরীক্ষামুলকভাবে ককটেল ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। হোয়াইট হাউজের কমিউনিকেশন বিষয়ক পরিচালক অ্যালিসা ফারাহ বলেছেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেননি ট্রাম্প। তিনিই প্রেসিডেন্টের চার্জে আছেন।
তবে শুক্রবারে সিনিয়রদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সের দায়িত্ব তিনি মাইক পেন্সকে দিয়েছেন। তাতে সভাপতিত্ব করার কথা মাইক পেন্সের। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অধীনে যদি প্রেসিডেন্ট এতটাই অসুস্থ হন যে, তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, তাহলে অস্থায়ীভিত্তিতে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন। বিবিসি লিখেছে, এর অর্থ হলো যদি ট্রাম্প সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত এবং কাজ শুরু না করা পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাইক পেন্স দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
শুক্রবার ট্রাম্পকে তার হেলিকপ্টার মেরিন ওয়ানে করে ওয়াশিংটন ডিসিতে ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে রাখা হয়েছে। এখানেই বার্ষিক চেকআপ করান ট্রাম্প। এদিন মুখে মাস্ক ও পরনে স্যুট পরিহিত ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউজের লন দিয়ে হেঁটে গিয়ে হেলিকপ্টারে আরোহণ করতে দেখা যায়। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাত নাড়েন এবং থাম-আপ দেন। তবে হেলিকপ্টারে আরোহনের আগে কোনো কথা বলেননি। তবে টুইটারে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেছেন, আমার মনে হচ্ছে বেশ ভালই আছি। সবকিছু ঠিকঠাকভাবে কাজ করছে সেটা নিশ্চিত হতে যাচ্ছি। ফার্স্টলেডিও বেশ ভাল আছেন। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। অন্যদিকে তার মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প ও ছেলে এরিক ট্রাম্প এই টুইটে রিটুইট করেছেন। তাতে তারা তাকে একজন যোদ্ধা হিসেবে প্রশংসা করেছেন। ইভানকা লিখেছেন, বাবা তোমাকে ভালবাসি।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কেলি ম্যাকইনানি এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ প্রফুল্ল আছেন। তার হালকা লক্ষণ দেখা দিয়েছে। সারাদিন তিনি কাজ করেছেন। পূর্ব সতর্কতা হিসেবে তার চিকিৎসক ও মেডিকেল বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তিনি আগামী কয়েক দিন ওয়াল্টার রিডের প্রেসিডেন্সিয়াল অফিস থেকে কাজ অব্যাহত রাখবেন। তার এবং ফার্স্টলেডির প্রতি ব্যাপক সমর্থনের জন্য ট্রাম্প ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বিবিসির মার্কিন অংশদার সিবিএস নিউজের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অল্প মাত্রায় জ্বর এসেছে।
ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র এক মাসের সামান্য বেশি সময় বাকি। এ সময়ে ৭৪ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনায় আক্রান্ত। তার এই বয়সটি করোনা ভাইরাসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময়ে তাকে ন্যূনতম হলেও কোয়ারেন্টিনে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। এর ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাকে এখন প্রতিযোগিতার কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। তিনি যদি কোয়ারেন্টিনের রীতি অর্থাৎ ১৪দিন কোয়ারেন্টিনে থাকেন, তাহলে মাঠ গরম রাখা তার জন্য কঠিন হতে পারে। আবার তিনি আক্রান্ত হওয়ার কারণে মার্কিন জনগণের সহানুভূতিও পেতে পারেন। তা নির্বাচনের পালে হাওয়া দিতে পারে, যেমনটা সুবিধা পেয়েছিলেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনিও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ফলে বৃটেনে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফরে যাওয়ার কথা মিনেসোটা, পেনসিলভ্যানিয়া, ভার্জিনিয়া, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা ও নর্থ ক্যারোলাইনাতে। কিন্তু তা এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
একদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন করোনায় আক্রান্ত তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেট দল থেকে জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেনের পরীক্ষা করা হয়েছে শুক্রবার। এতে তাদের করোনা নেগেটিভ এসেছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন তারা। তিনি মিশিগানের গ্রান্ড র্যাপিডসে শুক্রবার এক প্রচারণায় বলেছেন, দেশপ্রেমিক হোন। এটি একজন ‘টাফ গাই’ হওয়া নিয়ে কথা নয়। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার জো বাইডেনকে মাস্ক পরা নিয়ে মস্করা করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, তার মতো আমি মাস্ক পরি না। যখনই তার (বাইডেন) দিকে তাকাবেন, দেখবেন তিনি মাস্ক পরে আছেন। ওদিকে ডেমোক্রেটদের নির্বাচনী শিবির বলেছে, তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে নেতিবাচক সব বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিচ্ছে। আবার ট্রাম্প ও ফার্স্টলেডির সুস্থতা কামনা করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি ডেমোক্রেটদের এক ভার্চুয়াল প্রচারণায় বলেছেন, আমরা সবাই মার্কিনি। আমরা সবাই মানুষ। আমরা চাই প্রতিটি মানুষ সুস্থ থাকুক। ডেমোক্রেটদের খুব শক্তিধর, প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ট্রাম্পের করোনা পজেটিভ ধরা পড়ার পর তার জন্য প্রার্থনা সুস্থতার জন্য।