উন্নত বিশ্ব ঝুঁকছে অ্যান্টিবডি টেস্টেই
কভিড-১৯ মোকাবেলায় সম্ভাব্য সর্বোচ্চসংখ্যক নমুনা পরীক্ষায় জোর দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউএইচও) আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন মহল। পিসিআর টেস্টের পাশাপাশি তুলনামূলক ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়ায় সর্বোচ্চসংখ্যক নমুনা পরীক্ষা নিশ্চিত করতে অ্যান্টিবডি টেস্টকেও এখন সমান গুরুত্বের চোখে দেখছে উন্নত দেশগুলো।
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের সবচেয়ে বহুল প্রচলিত মাধ্যম হলো পিসিআর টেস্ট। দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্তের জন্য এটি কার্যকর। এক্ষেত্রে সংগৃহীত নমুনায় ভাইরাসের জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল ‘আরএনএ’ রয়েছে কিনা সেটি পিসিআরের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়। কারো শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল কিনা, সেটি নিশ্চিত করা যায় অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে। সাধারণত সংক্রমণের সাত থেকে ১৪ দিনের মধ্যে দেহে এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। অ্যান্টিবডি তৈরির আগে এ টেস্টের মাধ্যমে কেউ কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছিল কিনা, সেটি জানা যাবে না। নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিতদের বড় একটি অংশের মধ্যে কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। যদিও উপসর্গমুক্ত এ সংক্রমিতরাও উপসর্গযুক্তদের মতোই বেশ দ্রুতগতিতে সংক্রমণ ছড়ায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপসর্গ প্রকাশ না পেলে মানুষ পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষা করাতে যাবে না, এটাই স্বাভাবিক। উপসর্গমুক্ত রোগীদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি টেস্ট কার্যকর হতে পারে। বিশেষ করে সংক্রমণের ব্যাপ্তির প্রকৃত চিত্র অনুধাবনের জন্যও এটি কার্যকর। এছাড়া সংক্রমণ ছড়ানো ঠেকাতে সর্বত্রই জনসাধারণের চলাচলে একধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেছে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চললে অনেকেই আয়হীন হয়ে পড়বে। লকডাউন দীর্ঘস্থায়ী হলে আরো নানা সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যাপক ভিত্তিতে ব্যয়সাশ্রয়ী অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে এরই মধ্যে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছে, তাদের কাজে যোগদানের অনুমতি দেয়া যেতে পারে।
এছাড়া একবার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার নজিরও রয়েছে অনেক। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে যেহেতু অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়, তাই দ্বিতীয়বার সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটি জটিল আকার ধারণ করবে না বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া এ অ্যান্টিবডি শরীরে কতদিন কার্যকর থাকে, সেটি নিয়েও দ্বিমত রয়েছে। বর্তমানে একই ব্যক্তির একাধিকবার সংক্রমণ ও অ্যান্টিবডির কার্যকারিতা নিয়ে অনেক গবেষণা চলমান রয়েছে। সামনের দিনগুলোয় এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
ব্যয়সাশ্রয়ী ও সহজে ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় উন্নত বিশ্বের দেশগুলো এরই মধ্যে অনেকগুলো অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। আরো অনেকগুলো কিট অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তাছাড়া গবেষণাগারে উন্নয়নমূলক পর্যায়েও রয়েছে অনেক কিট।
চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুরের মতো দেশ এরই মধ্যে এ নীতি অনুসরণের মাধ্যমে বেশ সফলতা পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির তথ্যানুসারে, দেশটিতে এরই মধ্যে সেলেক্স, কেমবায়ো, অর্থো ক্লিনিক্যাল, মাউন্ট সিনাই ল্যাবরেটরি, অটোবায়ো, ডায়াসরিন, অ্যাবট, বায়োরাড, রোশে, ইউরোইমান, ওয়াডসর্থ, হিলজেন সায়েন্টিফিক, সিমেন্স হেলথকেয়ার, ভাইব্র্যান্ট আমেরিকা, হ্যানজো বায়োটেস্ট বায়োটেক, ইনবায়োস ইন্টারন্যাশনাল নামে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট পরীক্ষার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এছাড়া চীনের অটো বায়োসায়েন্স, ওরিয়েন্ট জিন বায়োটেক, স্ক্যানওয়েল হেলথ, যুক্তরাজ্যে এডিনবরা জেনেটিকস, সিঙ্গাপুরে ওয়াং ল্যাব, সুইজারল্যান্ডে কুইটেন্ট এবং মেক্সিকো ও ব্রাজিলে কাবলা ক্লিনিক্যাল ডায়াগনস্টিকের কিটের মাধ্যমে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতিবেশী ভারতের কলকাতায়ও এখন অ্যান্টিবডি টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
অ্যান্টিবডি টেস্টের বিষয়ে জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শ হলো অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি এসব কিটের কার্যকারিতার বিষয়ে স্বতন্ত্র সংস্থার প্রতিবেদন সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যান্টিবডি টেস্ট করছে, তাদের পর্যবেক্ষণগুলোও কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যালোচনার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।