‘উপসর্গহীন রোগীদের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর বিষয় অজানা’

কোনো লক্ষণ নেই—এমন রোগী থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কতটা ছড়ায়, তা এখনো একটি ‘বড় অজানা’ হয়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন বিজ্ঞানী। গতকাল মঙ্গলবার তিনি এ কথা বলেন। এর আগে গত সোমবার সংস্থাটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা মারিয়া ভ্যান কেরখোভে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, ‘উপসর্গহীন রোগীদের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর ঘটনা বেশ কম।’ বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

করোনাভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে উপসর্গহীন রোগীরা বড় ধরনের উদ্বেগ সৃষ্টি করেছেন। যেহেতু এই রোগীদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয় না, ফলে সঠিক প্রক্রিয়ায় আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ে—এত দিন এমনটাই বলছিলেন গবেষকেরা। সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ বিজ্ঞানী বলেছিলেন, উপসর্গহীন রোগীদের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর ঘটনা বেশ কম। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই চিত্র দেখা গেছে।

এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মারিয়ার বক্তব্য বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। তাঁর এ বক্তব্যের পর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেন। এরপর আগের বক্তব্য থেকে সরে আসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গতকাল এক ব্রিফ্রিং ডেকে মারিয়া বলেছেন, এই পর্যবেক্ষণ তুলনামূলকভাবে ছোট্ট অধ্যয়নের ভিত্তিতে করা হয়েছিল।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিডিসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত মোট রোগীর ৩৫ শতাংশের ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। তবে সোমবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মারিয়া ভ্যান কেরখোভে বলেন, এই উপসর্গহীন রোগীদের মাধ্যমে অন্য ব্যক্তিদের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ‘বেশ দুর্লভ’।

মারিয়া বলেন, যেসব দেশে কঠোরভাবে কন্টাক্ট ট্রেসিং করা হয়েছে, সেসব দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায়। সেগুলো বিশ্লেষণ করেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য অধিকতর তথ্যের বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এর জন্য আরও বেশি দেশ থেকে তথ্য পাওয়া দরকার। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এমন ধরন দেখা যাচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে সর্বসম্মত ও নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নিতে হলে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

গতকাল মারিয়া তাঁর আগের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, তাঁর মূল্যায়ন নির্দিষ্ট গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল, যা পিয়ার রিভিউয়ের মধ্য দিয়ে যায়নি এবং এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকায় কোনো পরিবর্তন প্রতিফলিত করে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এখন বিভিন্ন দেশের উচিত উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদের করোনা পরীক্ষা করা এবং টেস্টে পজিটিভ হলে তাদের সঠিক প্রক্রিয়ায় আইসোলেশনে নেওয়া। বিশেষ করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে কারা ছিলেন, তার খোঁজ বের করা অত্যন্ত জরুরি।

মারিয়া বলেছেন, উপসর্গহীন রোগীদের ভাইরাস ছড়ানোর গাণিতিক মডেলিংয়ের বিস্তৃত পরিসর রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমান করে যে করোনাভাইরাসযুক্ত প্রায় ১৬ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে কখনোই লক্ষণ প্রকাশ পায় না, তবে তারা ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হতে পারে। কিছু অনুমান অনুযায়ী, প্রায় ৪০ শতাংশ উপসর্গহীন রোগী এটি ছড়াতে পারে।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার একপর্যায়ে উপসর্গহীন রোগীদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। সাধারণত বয়সে নবীন ও শারীরিকভাবে সুস্থ বেশ কিছু মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও কোভিড-১৯ রোগের কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি।

সোমবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. তেদরোস আধানোম গেব্রোয়াসুস সাংবাদিকদের বলেন, ইউরোপে করোনাভাইরাস মহামারি অবস্থার উন্নতির দিকে। তবে সার্বিকভাবে বৈশ্বিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। গত ১০ দিনের ৯ দিনে বিশ্বজুড়ে ১ লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.