ভয়াবহ ভূমিকম্প: উৎপত্তিস্থল নরসিংদী হওয়ার কারণ জানালেন বিশেষজ্ঞরা

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে শুক্রবার (২১ নভেম্বর)। এদিন সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রিখটার স্কেল অনুযায়ী ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যা কয়েক সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানীর ঢাকার অদূরে নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলা।

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী হওয়ার পেছনে বেশ কিছু যৌক্তিক কারণ বিশ্লেষণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির ওয়েবসাইটে একটি গবেষণার সারাংশ প্রকাশ হয়েছে। বাংলাদেশে ভূমিকম্পের প্রবণতা নিয়ে গবেষণাটি করেন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষণা প্রতিষ্ঠান ল্যামন্ট-ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরির অধ্যাপক মাইকেল স্টেকলার ও লিওনার্দো সিবার। এ কাজে বাংলাদেশের কয়েকজন গবেষকও যুক্ত ছিলেন।

ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলের মধ্যে একটি। এটি তিনটি টেকটোনিক প্লেটের মিলনস্থলে অবস্থিত—ভারতীয় প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট ও বার্মিজ প্লেট।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, শুক্রবার বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে (ঢাকা ও আশপাশের জেলা) ভূমিকম্পটি হয়েছে, ভারতের প্লেটের গভীরে রিভার্স ফল্টিংয়ের কারণে। ভূতত্ত্বে রিভার্স ফল্ট হলো এক ধরনের ডিপ-স্লিপ ফল্ট, যেখানে ভূপৃষ্ঠের চাপের কারণে দুটি শিলা ব্লকের মধ্যে স্থানচ্যুতি ঘটে এবং একটি আরেকটির ওপরে উঠে যায়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পূরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, বাংলাদেশে অন্তত ৫টি ফল্ট লাইন আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, নোয়াখালী থেকে কক্সবাজার এবং নোয়াখালী থেকে সিলেট। ধারণা করা হচ্ছে, নোয়াখালী থেকে সিলেটের যে ফল্ট লাইন সেটির কারণেই শুক্রবার ভূমিকম্প হয়েছে।

ভারতীয় প্লেটের ফল্ট লাইন থেকে গত মার্চে মিয়ানমারে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। দ্য গার্ডিয়ানের তথ্য, সেটি ছিল ‘স্ট্রাইক-স্লিপ ফল্টিং’ এর কারণে, যা বোঝায়- ভারতের এবং ইউরেশিয়ার প্লেটগুলো একপাশে পরস্পরকে ঘেঁষা অবস্থায় ছিল।

উল্লেখ্য, শুক্রবারের ভূমিকম্পে ভেঙে ও হেলে পড়েছে বিভিন্ন স্থাপনা-ভবন। এতে সারাদেশে ১০ জনের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন সাড়ে ৫ শতাধিক বেশি। আহতরা দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট সাড়ে চার শতাধিক আহত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৬৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে এবং গুরুতর আহত ১৬ জনকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

You might also like

Comments are closed.