যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলা উত্তেজনা, কী বলছেন বিশ্লেষকরা?

সামরিক শক্তিমত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছেও নেই ভেনেজুয়েলা। তারপরও কেনো, সবচেয়ে বড় মার্কিন রণতরী আর এটিকে ঘিরে থাকা দুর্ভেদ্য নৌ-বহর ক্যারিবিয়ান সাগরে পাঠিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প? বিশ্লেষকরা বলছেন, চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে পদত্যাগে বাধ্য করাতে চাইছেন ট্রাম্প। মাদুরো নিজেও এটি বুঝেছেন। তাই প্রতিরোধ গড়তে নিয়েছেন নানা পদক্ষেপ।

সম্প্রতি ক্যারিবিয়ান সাগরে নোঙর করেছে ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও বৃহত্তম এই বিমানবাহী রণতরীকে ঘিরে অবস্থন নিয়েছে আরও বেশকিছু যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন, বম্বার আর এফ-থার্টি ফাইভ-বি ফাইটারসহ উন্নত সব যুদ্ধযানের এক শক্তিশালী বহর।

সাগরের মাঝে এই দুর্ভেদ্য ভাসমান দূর্গ মোতায়েনের কারণ হিসেবে মাদক চোরাচালানকে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই জেরে গেল কয়েক সপ্তাহে কোনো প্রমাণ কিংবা জবাবদিহিতা ছাড়াই অঞ্চলটির অন্তত ২০টি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন সেনারা। মাদক সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম বন্ধে এসেছে অপারেশন সাউদার্ন স্ফিয়ার পরিচালনার ঘোষণাও। তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধুই অজুহাত। মূলত, অঞ্চলটিকে ঘিরে আরও বড় পরিকল্পনা সাজিয়েছে ওয়াশিংটন।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) সিনিয়র উপদেষ্টা ও অবসরপ্রাপ্ত মেরিন কর্মকর্তা মার্ক ক্যানসিয়ান বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানের জন্য ফোর্ড ততটা উপযোগী নয়। এটি মূলত সমুদ্রে বা স্থলে প্রতিপক্ষকে আক্রমণের জন্য মোয়াতেন করা হয়ে থাকে। মার্কিন প্রশাসন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, মূল লক্ষ্য এটি নয়। এর সাথে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে মাদুরো বিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম।

এদিকে, উপকূলের এতো কাছে শত্রুর নৌবহর মোতায়েনে স্বাভাবিকভাবেই চাপে ভেনেজুয়েলা। মার্কিন হামলা ঠেকানোর মতো যথেষ্ট সক্ষমতাও নেই দেশটির। তবে, কেনো এই বিশাল নৌবহর পাঠালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প?

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক কারণেই এমন সিদ্ধান্ত ওয়াশিংটনের। চাপ প্রয়োগ করে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করাই ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য। তবে, মাদুরো এই পরিকল্পনা বুঝে দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করছেন।একারণেই দেশজুড়ে সামরিক মহড়ার আয়োজন করছে তার প্রশাসন। বেসামরিকদেরও দেয়া হচ্ছে যুদ্ধাস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ।

ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কার্লোস পিনা বলেন, আমার মতে, কোনো সশস্ত্র হামলা চালানো নয়। এসব করে মাদুরোকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে চাপ সৃষ্টি করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে কোনোভাবেই হার মানবেন না ট্রাম্প। সময় যতই গড়াবে, ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে তত বেশি যুদ্ধ জাহাজ, ফাইটার আর সেনাসদস্য মোতায়েন করবেন তিনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালোই ধারণা রাখেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। একারণে তিনি দেশের জনগনকে যেকোনো মার্কিন সামরিক পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত রাখছেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর সমর্থন আদায়ে নিচ্ছেন বিভিন্ন পদক্ষেপ।

You might also like

Comments are closed.