ইউরোপে আজ থেকে ১ ঘণ্টা পেছাবে ঘড়ির কাঁটা
ইউরোপে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পিছিয়ে যাবো আজ রোববার থেকে। এতে মানুষ ঘুমাবে এক ঘণ্টা বেশি। কিন্তু এই সময় পরিবর্তন ঘিরে আবারও জোরালো হয়েছে বিতর্ক— এটি কি সত্যিই দরকারি, নাকি মানুষের স্বাস্থ্য ও মানসিক ভারসাম্যের জন্য ক্ষতিকর?
আরও পড়ুন
সংবাদমাধ্যম ইউ নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রোববার থেকে ইউরোপ আবারও ‘স্ট্যান্ডার্ড টাইম’-এ ফিরছে। স্থানীয় সময় শনিবার মধ্যরাত তথা ২৫ ও ২৬ অক্টোবরের মাঝরাত ৩টায় ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পিছিয়ে ২টায় নামানো হবে। এর ফলে মানুষ এক ঘণ্টা বেশি ঘুমাতে পারবে।
নতুন এই সময়সূচি চলবে ২০২৬ সালের মার্চের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। এরপর থেকে আবার ‘ডে-লাইট সেভিং টাইম’ কার্যকর হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বছরে দুইবার সময় পরিবর্তনের এই প্রথা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলমান।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় বলেন, বছরে দুইবার সময় পরিবর্তনের কোনো যৌক্তিকতা আর নেই। এই বিষয়টি ইইউ এনার্জি কাউন্সিলের আলোচ্যসূচিতে আনতে স্পেন উদ্যোগ নিয়েছে।
২০১৯ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অনুমোদিত একটি প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ২০২১ সালের মধ্যেই প্রতিটি সদস্য দেশকে একটি নির্দিষ্ট সময় বেছে নিয়ে স্থায়ীভাবে তা অনুসরণ করতে হবে। তবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হওয়ায় প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সময় পরিবর্তন বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে উত্তর ইউরোপের দেশগুলো। সেখানে গ্রীষ্মের দিনগুলো দীর্ঘ এবং শীতের দিনগুলো ছোট হয়। এক ঘণ্টা সময় পরিবর্তন সেখানে তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। বিপরীতে, দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোতে ডে-লাইট সেভিং টাইমের ফলে সন্ধ্যায় অতিরিক্ত আলো পাওয়া যায়। এর ফলে গৃহস্থালি ও ব্যবসায়িক খাতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে এবং পরিবেশ রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েও বিতর্ক আছে। ২০১৮ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ৮৪ শতাংশ মানুষ স্থায়ী সময়ের পক্ষে থাকলেও সেই জরিপে অংশ নিয়েছিল মাত্র ৪.৬ মিলিয়ন ইউরোপীয় নাগরিক। মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ এই সংখ্যা। এছাড়া জরিপে অংশ নেওয়াদের ৭০ শতাংশই ছিলেন জার্মান নাগরিক।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বছরে দুইবার সময় পরিবর্তন মানুষের মানসিক চাপ বাড়ায়, বিশেষ করে উত্তর ইউরোপের মানুষের মধ্যে। ডে-লাইট সেভিং টাইম থেকে স্ট্যান্ডার্ড টাইমে ফেরার সময় দিনের আলো কমে যায়, যা অনেকের মধ্যে হতাশা (ডিপ্রেশন) সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, ডে-লাইট সেভিং টাইম কার্যকর হলে হঠাৎ আলোর সময় বেড়ে যাওয়ায় শরীরের মেটাবলিজমের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ৬৭ জন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য আয়ারল্যান্ডের এমইপি শন কেলির নেতৃত্বে, ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডার লায়েনকে একটি চিঠিতে সময় পরিবর্তন বন্ধের দাবি জানান।
তাদের মতে, বছরে দুইবার ঘড়ির সময় পরিবর্তন ‘স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সাধারণ সুস্থতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং এটি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়।

Comments are closed.