মুরগিরাও ভুগছে স্ট্রেসে, পাড়ছে পানসে স্বাদের ডিম

একটা সময় ডিমের অমলেট দিয়ে পেট ভরে ভাত খাওয়া যেত। সেদ্ধ ডিম চটজলদি খেয়েও সারা যেত সকালের নাশতা। কিন্তু এখন কেন জানি আর আগের মতো স্বাদ মেলে না ডিমে। কুসুমে আর মেলে না গাঢ় সোনালি রঙ। তার ওপর ডিমের খোসা যেন আগের চেয়েও পাতলা হয়ে গেছে, বেড়েছে নষ্টের সংখ্যাও।

এমন অভিযোগ কেবল আপনার নয়, ডিমের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি খেয়াল করেছেন অনেকেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিমের মান নিঃশব্দে কমছে। ফিকে স্বাদের অমলেটই তার প্রমাণ। পাশাপাশি বাজার দখল করেছে নকল ডিমও। কেন ডিমের স্বাদ রয়েছে? এর পেছনে দায়ী কোন কারণ? জানুন এই প্রতিবেদনে-

আগের তুলনায় আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়েছে। এখন বছরের বড় সময়ই গরম থাকে। আর এই বাড়তি তাপমাত্রা পোলট্রির ক্ষতি করছে। অনেক ছোট খামারে নেই পর্যাপ্ত তাপমাত্রা। ফলে মুরগিরা অতিরিক্ত গরমে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। ফলে ডিম পাতলা কিংবা পানসে পাড়ছে তারা। অনেক সময়ে ডিম পাড়াও বন্ধ করে দিচ্ছে মুরগিরা।

জলবায়ু পরিবর্তন এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মানুষের মতো মুরগিরাও স্ট্রেসের শিকার হয়। এতে তাদের বিপাকক্রিয়া এবং দেহে ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে ডিমের গুণমানে।

chicken1


২০১৪ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মুরগিদের খাদ্যগ্রহণ ৩০ শতাংশ কমে গেছে এবং ডিম উৎপাদনের হার  কমেছে ১১ শতাংশ। একইসঙ্গে ডিমের খোসা পাতলা, কুসুমের রং ফিকে হতে শুরু করেছে তাপমাত্রার কারণে।

এছাড়াও অনেক ব্যবসায়ী দিনের পর দিন ফ্রিজের বাইরে ডিম রাখেন। এতে ডিম ২-৩ দিনের বেশি ভালো থাকে না। ডিম পুরনো হলে তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। এতে শুধু স্বাদই নষ্ট হয় না, এমন ডিম খেলে অসুস্থ হওয়ারও আশঙ্কাও থাকে।

egg1

আবার চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন না থাকায় অনেকেই নকল ডিম বিক্রি শুরু করেছে। রেজিন, সোডিয়াম অ্যালজিনেট ইত্যাদি রাসায়নিক দিয়ে বানানো ডিম দেখতে আসল মনে হলেও এতে কোনো পুষ্টিগুণ নেই। বরং এগুলি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

নকল ডিমের খোসা অস্বাভাবিক মসৃণ বা রাবারের মতো হয়। এই ডিম ফাটালে কুসুম এবং সাদা অংশ সহজেই মিশে যায় বা জেলির মতো লাগে। আসল ডিমে স্বাভাবিক গন্ধ থাকে, নকলের গন্ধ রাসায়নিক বা গন্ধহীন হয়।

egg2

সস্তায় বেশি ডিম উৎপাদনের লোভে অনেক খামার মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক ও হরমোন দেয়। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ও দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করলেও, ডিমে ওষুধের অবশিষ্টাংশ থেকে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর। এই অবশিষ্টাংশ শরীরে গেলে ভবিষ্যতে কোনো সংক্রমণে ওষুধ কার্যকর না-ও হতে পারে।

You might also like

Comments are closed.