ধৈর্যের মহাপুরস্কার ও অধৈর্যের আক্ষেপ

ধৈর্য ইসলামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এটি ঈমানের পরিপূর্ণতার লক্ষণ এবং জান্নাতে উচ্চ মর্যাদার সোপান। কিন্তু যারা এই মহান গুণ থেকে বঞ্চিত, কেয়ামতের দিন তাদের জন্য অপেক্ষা করবে গভীর অনুশোচনা ও আক্ষেপ।

ধৈর্যশীলদের জন্য মহাপুরস্কার
জাবির (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিনে যখন বিপদে ধৈর্যধারী মানুষদের প্রতিদান দেওয়া হবে, তখন দুনিয়াতে বিপদমুক্ত থাকা লোকেরা আকাঙ্ক্ষা করবে—হায়! যদি দুনিয়াতে আমাদের দেহ কাঁচি দিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হতো!’ (তিরমিজি: ২৪০২)

আল্লাহর সঙ্গে থাকার ঘোষণা
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যধারণকারীদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা: ১৫৩)
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, আর আপনার ধৈর্য হবে আল্লাহর সাহায্যেই।’ (সুরা নাহল: ১২৭)

 

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ
আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। আর তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫)
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় ধৈর্যশীলদেরকে তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে, কোনো হিসাব ছাড়াই।’ (সুরা যুমার: ১০)

হাদিসে বর্ণিত অপরিসীম মর্যাদা
সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করার চেষ্টা করে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীল বানিয়ে দেন। আর ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপকতর কোনো নেয়ামত কাউকে দেওয়া হয়নি।’ (বুখারি: ১৪৬৯)
জান্নাতের নিশ্চয়তা: ‘আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে আদমসন্তান! তুমি যদি প্রথম ধাক্কায় ধৈর্য ধরো এবং তার প্রতিদানে সওয়াবের আশা করো, তবে আমি তোমার জন্য জান্নাত ছাড়া অন্য কোনো পুরস্কারে সন্তুষ্ট হবো না।’ (ইবনে মাজাহ: ১৫৯৭)

ধৈর্যহীনদের জন্য সতর্কবার্তা
যারা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে ধৈর্য হারায়, তাদের জন্য কেয়ামতের দিন অপেক্ষা করছে মর্মন্তুদ পরিণতি:

গভীর আক্ষেপ: ‘হায়! আমরা যদি দুনিয়াতে একটু বেশি ধৈর্য ধরতাম!’
অনুতাপ: ‘যদি আমরা চিরস্থায়ী সুখের বিনিময়ে ক্ষণস্থায়ী আরামকেই প্রাধান্য দিলাম!’
আত্ম-অভিশাপ: নিজেদের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য তারা নিজেরাই নিজেদের অভিশাপ দিতে থাকবে।

সফলতার চাবিকাঠি
ধৈর্য কেবল একটি গুণই নয়, এটি মুমিনের জীবনদর্শন। নবীজির (স.) সমগ্র জীবনই ছিল ধৈর্যের এক মহান ও জীবন্ত উদাহরণ। যারা আজ ক্ষণিকের কষ্ট-ক্লেশ ও প্রতিকূলতা সহ্য করতে পারবে, তারাই আগামীকাল আল্লাহর কাছে চিরস্থায়ী শান্তি ও সুখ লাভ করবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ধৈর্যশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে কেয়ামতের দিনের সকল আক্ষেপ ও অনুশোচনা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

You might also like

Comments are closed.