আয়াতুল কুরসি পড়ে হাতে তালি দেয়া বা বুকে ফুঁ দেয়া নিয়ে কী বলে ইসলাম?

পবিত্র কুরআনের দ্বিতীয় সুরা বাকারায় প্রসিদ্ধ একটি আয়াত রয়েছে। এটি হলো সুরাটির ২৫৫ নম্বর আয়াত। যা আয়াতুল কুরসি নামে পরিচিত। মদিনায় অবতীর্ণ এই সুরাটির ২৫৫ নম্বর আয়াতে মহান রবের একত্ববাদ, মর্যাদা ও গুণের বর্ণনা রয়েছে। এ কারণে আয়াতটির মধ্যে অনেক ফজিলতও রয়েছে।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন- প্রতিটি বস্তুরই শীর্ষদেশ রয়েছে। কুরআনের শীর্ষস্থানীয় সুরা হলো সুরা বাকারা। এতে এমন একটি আয়াত রয়েছে যেটি হলো কুরআনের আয়াতসমূহের মধ্যে প্রধান। সেটি হলো আয়াতুল কুরসি। (সুনান আত তিরমিজি, হাদিস: ২৮৭৮)

উবাই ইবন কাব (রা.) থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদিসে এসেছে, একবার রাসুল (সা.) বলেন, হে আবুল মুনযির! তোমার নিকট কুরআনের কোন আয়াতটি সর্বাপেক্ষা সম্মানিত? আমি বলি, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সা.) এ বিষয়ে অধিক অবগত। পরে তিনি (রাসুল সা.) পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, হে আবুল মনযির! তোমার নিকট কুরআনের কোন আয়তটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ? হাদিস বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি বলি, ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম।’ এটি শুনে তিনি (রাসুল সা.) আমার বক্ষে হাত চাপড়িয়ে (মহব্বতের সঙ্গে) বলেন, হে আবুল মুনযির! তোমার জন্য কুরআনের ইল্‌ম (জ্ঞান) বরকতময় হোক। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১৪৬০; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৭৫৮)

 

পবিত্র কুরআনের প্রসিদ্ধ এই আয়াতটি পাঠের বিশেষ ফজিলতও রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) আমাকে রমজানে প্রাপ্ত যাকাতের মালামাল হেফাজতের দায়িত্ব দিলেন। ওই সময় জনৈক ব্যক্তি এসে খাদ্যদ্রব্য উঠিয়ে নিতে উদ্যত হলো। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর নবী (সা.) এর কাছে নিয়ে যাবো।

এরপর পুরো হাদিস বর্ণনা করেন তিনি (আবু হুরায়রা রা.)। যেখানে লোকটি তাকে বলেন, যখন আপনি ঘুমাতে যাবেন, তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করবেন। এর ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন পাহারাদার নিযুক্ত করা হবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান আপনার কাছে আসতে পারবে না। পরে রাসুল (সা.) এ ঘটনা শুনে আবু হুরায়রা রা. কে বললেন, (যে তোমার কাছে এসেছিল) সে সত্য কথা বলেছে, যদিও সে বড় মিথ্যাবাদী শয়তান। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৬৪৬)

 

এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হলো প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পড়া। এটি সুন্নত। আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অন্তরায় থাকবে না।’ (শুআবুল ঈমান: ২৩৯৫; সুনান আন নাসায়ি, হাদিস: ৯৪৪৮)

তবে আয়াতুল কুরসি নিয়ে প্রায়সময় একটি কথা শোনা যায় যে, সুরা বাকারার এই আয়াতটি পাঠ করে হাতে তালি দিলে তালির আওয়াজ যতদূর যাবে, ততদূর চোর-ডাকাত আসতে পারবে না। কেউ কেউ বলেন, আয়াতুল কুরসি পড়ে বুকে বা শরীরে ফুঁ দিলে আল্লাহর নিরাপত্তা লাভ হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এমন কথার ভিত্তি কতটুকু?

ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহর মতে, রাসুল (সা.) থেকে আয়াতুল কুরসি পাঠের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এর একটি মর্যাদা হলো- যে বাসায় বা ভবনে বা যে জায়গায় বসে আয়াতুল কুরসি রাতের বেলায় তেলাওয়াত করা হয়, সেই রাতে ওই স্থানকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চুরি-ডাকাতি ইত্যাদি থেকে হেফাজতে রাখেন। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তিনবার হাতে তালি দিতে হবে, তালির আওয়াজ যতদূর যাবে ততদূর নিরাপত্তার আওতায় চলে আসবে বা শরীরে ফুঁ দিতে হবে, এমন কোনো কথা কুরআন ও হাদিসে আসেনি।

 

এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, শরিয়তে নেই এমন কোনোকিছু ইসলামে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধ রয়েছে। আলী (রা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি সুন্নাত বিরোধী (বিদাআত) উদ্ভাবন করে কিংবা বিদআতীকে আশ্রয় দেয়, তার ওপর আল্লাহ, ফিরিশতা ও সকল মানুষের লানত (অভিশাপ)। আল্লাহ তার কোনো নফল ও ফরজ ইবাদত কবুল করেন না। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৯৪৮)

আরবিতে আয়াতুল কুরসি:

 اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ

বাংলা: আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম। লা তা’খুজুহু সিনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশ ফাউ ইনদাহু ইল্লা বিইজনিহি, ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহিতুনা বিশাইইম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমাশা’আ, ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিইয়্যুল আজিম।

 

অর্থ: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।

You might also like

Comments are closed.