কৃত্রিম পায়ে আবার হাঁটলো আহত উট ‘ক্যামি’

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের সংঘর জেলায় এক নির্মম ঘটনার শিকার হয়ে সামনের পা হারানো উট ‘ক্যামি’ এক বছর পর আবার দাঁড়িয়ে হাঁটতে সক্ষম হয়েছে কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে।

সোমবার (১৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে জিও নিউজ।

গত বছরের জুন মাসে সংঘরের মান্ধ জামরাও এলাকায় খাদ্যের খোঁজে একটি জমিতে ঢুকে পড়ায় এক জমিদার শাস্তিস্বরূপ ক্যামির সামনের পা কেটে ফেলেন। নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া ক্যামির ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ছয়জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়।

ঘটনার পরপরই ক্যামিকে করাচির কমপ্রিহেনসিভ ডিজাস্টার রেসপন্স সার্ভিসেস (সিডিআরএস) বেনজি অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার প্রজেক্টের তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয়। সেখানে গত এক বছর ধরে ক্যামির নিবিড় চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং কৃত্রিম পা সংযোজনের প্রক্রিয়া চলে।

মঙ্গলবার এক আবেগঘন মুহূর্তে সিডিআরএস সামাজিক মাধ্যমে ক্যামির প্রথমবারের মতো কৃত্রিম পায়ে দাঁড়ানোর ভিডিও শেয়ার করে লিখেছে, ‘ক্যামি দাঁড়িয়েছে।’

তাদের পোস্টে বলা হয়, ‘এক বছর আগে ঠিক এই দিনে ক্যামিকে নির্মমভাবে আহত করে মরতে ফেলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু আজ, ক্যামি কৃত্রিম পায়ে দাঁড়িয়েছে। এই এক বছর ছিল চোখের জলে, ব্যথায়, পুনর্বাসনে আর নিঃশব্দ সংগ্রামে ভরা। সবাই বলেছিল হাল ছেড়ে দিতে, তাকে ত্যাগ করতে। কিন্তু আমরা তা করিনি। আজ ক্যামি আমাদের সবার জন্য দাঁড়িয়েছে।’

তারা আরও জানায়, ‘ক্যামির কৃত্রিম পায়ে অভ্যস্ত হতে এখনও সময় লাগবে, তবে আজকের দিন উদযাপনের, আশার এবং সেইসব নীরব জয়ের দিন, যা আসে তখনই যখন কেউ হাল ছেড়ে দেয় না।’

 

সিডিআরএস তাদের নিবেদিত টিম, সমর্থক এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির এমএনএ শাজিয়া মাররি ও সিনেটর কুরাতুলাইন মাররির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। সিন্ধু সরকার ক্যামির চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের প্রতিশ্রুতি দেয়, আর মাররি বোনেরা পুরো প্রক্রিয়াকে ‘যৌথ প্রচেষ্টা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান।

শাজিয়া মাররি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘মাসের পর মাস কঠোর পরিশ্রম আর যত্নের ফল যখন এমনভাবে প্রকাশ পায়, তখন তার আনন্দই আলাদা।’

কুরাতুলাইন মাররি লিখেছেন, ‘অস্থায়ী ক্ষোভের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি নিবেদিত সেবা অনেক বড়। ক্যামির জন্য যারা এখনও কাজ করে যাচ্ছেন, তারাই সত্যিকারের নায়ক।’

সিডিআরএস বায়োনিক পেটসের প্রতিষ্ঠাতা ডেরিক ক্যাম্পানার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে, যিনি ক্যামির জন্য বিশেষভাবে তৈরি উপযুক্ত কৃত্রিম পা সরবরাহ করেছেন।

ক্যামির এই নতুন করে দাঁড়িয়ে হাঁটা পাকিস্তানে পশু কল্যাণের ক্ষেত্রে এক আশার বার্তা এবং মানবিকতার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকলো।

You might also like

Comments are closed.