অডিও গ্যাজেটের অত্যধিক ব্যবহারে যেসব ক্ষতি হয়
হাতে স্মার্টফোন, কানে ইয়ারফোন বা ব্লুটুথ—এ যেন আজকের প্রজন্মের অপরিহার্য সঙ্গী। রাস্তাঘাট, শপিং মল, অফিস—এমনকি বাড়ির মধ্যেও এই দৃশ্য এখন নিত্যদিনের। অথচ এই অভ্যাসের পেছনেই লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর বিপদের আশঙ্কা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সাম্প্রতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ১১০ কোটির বেশি কিশোর ও যুবক শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।
মূল কারণ—ইয়ারফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার। ১২ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই দীর্ঘ সময় ইয়ারফোন ব্যবহারজনিত কানের সমস্যায় আক্রান্ত—এই তথ্য উঠে এসেছে সমীক্ষা বিশ্লেষণে।
চিকিৎসকরা কী বলছেন?
কর্ণ ও শ্রবণবিশেষজ্ঞদের মতে, কানে টিউমার (অ্যাকুস্টিক নিউরোমা)-এর মতো সমস্যার হার ক্রমেই বাড়ছে। হেডফোন বা ইয়ারফোনে উচ্চ শব্দে গান শোনা এর অন্যতম কারণ। নাইটক্লাব বা লাউড স্পিকারে চলা কম ফ্রিকোয়েন্সির বুম বুম শব্দ দীর্ঘ সময় শোনার পর কানে ‘ঝিঁ ঝিঁ’ ধরনের গুনগুন শব্দ বাজতে থাকে, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় টিনিটাস।
ইয়ারফোন ব্যবহারে বাড়ছে যেসব সমস্যা—
১। মাথা ব্যথা ও মাইগ্রেন
দীর্ঘক্ষণ ইয়ারফোন ব্যবহারে কানের ভেতর চাপের তারতম্য ঘটে। এর প্রভাবে কানে ও আশেপাশের অংশে ব্যথা হতে পারে। বাড়তে পারে মাইগ্রেনের সমস্যাও।
২। ভারসাম্যহীনতা
কানের একটি অংশ শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। উচ্চ শব্দে দীর্ঘ সময় গান বা অডিও শোনার ফলে এই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানোর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩। শ্রবণশক্তি হ্রাস
দীর্ঘদিন উচ্চ শব্দে গান শোনার ফলে শ্রবণশক্তি ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। কানের ভেতরের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা স্থায়ী শ্রবণদৌর্বল্যও সৃষ্টি করতে পারে।
৪। কানে সংক্রমণ
ইয়ারফোন পরলে কানের মধ্যে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে ভেতরের আর্দ্রতা জীবাণুর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে, ফলে ইনফেকশনের আশঙ্কা বেড়ে যায়। ইয়ারফোনে জমে থাকা ব্যাক্টেরিয়াও সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
সমাধান কী?
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, নিয়মিত ও দীর্ঘ সময় ইয়ারফোন ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত। যদি ব্যবহার করতেই হয়, তবে হেডফোন ব্যবহার করাই শ্রেয়, কারণ এটি কানের ভিতরে না ঢুকে বাইরের অংশে বসে থাকে। সেই সঙ্গে শব্দের মাত্রা কম রাখা, মাঝে মাঝে কানে বিশ্রাম দেওয়া এবং ইয়ারফোন নিয়মিত পরিষ্কার রাখাও জরুরি। অতিরিক্ত প্রযুক্তি নির্ভরতা স্বাস্থ্যের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। সচেতন থাকলেই এই বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

Comments are closed.