আষাঢ়ে বেড়েছে কদম ফুলের চাহিদা
‘স্যার, বৃষ্টিত ভিইজ্যা পিছলা গাছে উইঠ্যা রিস্ক লইয়া ফুল গুলান আনছি। এতগুলা কদমফুল, দাম ২০ ট্যাকা দিবেন না!’
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য চত্বরের পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০-১১ বছরের একটি মেয়ে প্রাতঃভ্রমণকারী মধ্য বয়সী এক ব্যক্তিকে উদ্দেশ করে কথাগুলো বলছিল।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর বৃক্ষমায়া নামক একটি শেডের পাশে বসে কিছুক্ষণ আগেই গাছ থেকে পেড়ে আনা কদমফুল পানি দিয়ে ধুয়ে তোড়া বানিয়ে রাখছিল সে। মেয়েটির কথা শুনে পুরান ঢাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসলাম নামের ওই ব্যক্তি কদমফুলের একটি তোড়া কিনে নেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, বর্ষাকালের শুরুতেই তিনি কদমফুলের খোঁজ করেন। পথশিশুরা উদ্যানের গাছ থেকে ফুলগুলো সংগ্রহ করে বিক্রি করে। তিনি তার মেয়ের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পথশিশুরা উদ্যানে ঘুরতে আসা তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের কাছে সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের ফুল বিক্রি করে।
শাহবাগের পাইকারি ফুলের দোকান থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে কিনে বা কুড়িয়ে এনে গোলাপ, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল বিক্রি করে। কিন্তু বর্ষাকালে তারা উদ্যান থেকে কদমফুল সংগ্রহ করে তোড়া আকারে সাজিয়ে বিক্রি করে।
ফুল বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ওরা কয়েকজন মিলে একসঙ্গে কাজ করে। কেউ গাছ থেকে ফুল পাড়ে, কেউ ধুয়ে মুছে রাখে, কেউ বিক্রি করে।
বর্ষাকালের সঙ্গে রয়েছে কদমফুলের অঙ্গাঅঙ্গি সম্পর্ক। অনেকেই বলেন কদম হলো বর্ষার দূত। বর্ষাকাল আর কদমফুল নিয়ে বহু বিখ্যাত কবিতা ও গান রয়েছে।
কদম গাছের পাতা লম্বা, উজ্জ্বল সবুজ ও চকচকে। বসন্তের শুরুতে গাছে নতুন পাতা গজায় এবং শীতে গাছের পাতা ঝরে যায়। পুরো ফুলটি একটি ফুল মনে হলেও এটি আসলে অসংখ্য ফুলের গুচ্ছ। যাতে হলুদ রঙের ফানেলের মতো পাপড়িগুলো আটকে থাকে। পাপড়ির মাথায় থাকে সাদা রঙের পরাগদণ্ড। ফল মাংসল, টক এবং বাদুড় ও কাঠবিড়ালির প্রিয় খাদ্য। ওরাই বীজ ছড়ানোর বাহন।

Comments are closed.