লালমনিরহাটে বাড়ছে তামাক চাষ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা
লালমনিরহাটে বাড়ছে বিষাক্ত তামাক চাষ। জেলার পাঁচ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী চরাঞ্চলে ব্যাপক হারে চাষ হচ্ছে তামাক। অধিক লাভের আশায় দিন দিন কৃষকরা তামাক চাষে ঝুঁকলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে ওই এলাকার চাষি ও শিশুদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তিস্তার বিভিন্ন চরাঞ্চল, আদিতমারী, কালীগঞ্জ ও হাতিবান্ধার অনেক কৃষক তামাক পরিচর্যার কাজে নারী-পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি শিশুদেরও কাজে লাগাচ্ছেন। তামাক গাছের পাতা ছেঁড়া, শুকানো, জমিতে সার ও কীটনাশক ছিটানোর মতো কাজেও শিশুদের উপস্থিতি দেখা গেছে। অথচ তামাক গাছ, পাতার গন্ধ, রাসায়নিক স্প্রে এসব শিশুদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
জেলার আদিতমারীর সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক রেজাউল করিম বলেন, ‘এক মৌসুমের জন্য ২৫ শতাংশ জমি চার হাজার টাকায় লিজ নিয়ে তামাক আবাদ করছি। কোম্পানি থেকে সার, বীজ, ওষুধ দিয়েছে। পাতা শুকিয়ে সরাসরি বিক্রি করা যায়। তামাকের দর ঠিক করে কোম্পানি। লাভের আশায় আমি করেই ফেলেছি।’
জেলা সদর হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তপন কুমার বলেন, ‘তামাক চাষে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদান, কীটনাশক ও পাতার প্রাকৃতিক নির্যাস শিশুদের শ্বাসতন্ত্র ও ত্বকের জন্য বিপজ্জনক। দীর্ঘ সময় তামাক গাছের পাশে কাজ করলে বা গন্ধে বারবার এক্সপোজার হলে শিশুদের ফুসফুসে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। এতে শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি এমনকি নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। অনেক সময় দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো রোগেরও ঝুঁকি তৈরি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তামাক চাষে শিশুদের সম্পৃক্ত করা যেমন বেআইনি, তেমনি নৈতিকভাবেও ভয়াবহ। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। লাভের আশায় যদি আমরা শিশুদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করি, তাহলে তা সমাজের জন্য গভীর অশনি সংকেত।’
এদিকে তামাকের বাজারমূল্য ও কোম্পানির প্রণোদনার ফাঁদে পড়ে কৃষকরা শরীরের ক্ষতি জেনেও চাষ করছেন। আদিতমারী উপজেলার সমতল ও তিস্তার চরাঞ্চলের অস্থায়ী জমিগুলোতে ধান, ভুট্টা, আলু কিংবা শীতকালীন সবজির মতো বিকল্প ফসল চাষের উপযুক্ত হলেও প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জমি এখন তামাকের দখল।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) লালমনিরহাটের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান বলেন, ‘অধিক লাভ ও বিভিন্ন কোম্পানির প্রলোভনে তামাক চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। চাষের শুরু থেকে বিক্রয় পর্যন্ত সবধরনের কাজে পরিবারের শিশুরাও সাহায্য করছে। এতে বিষবৃক্ষের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে তাদের ওপর।’
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা শাহ আলম জানান, ‘কৃষি বিভাগ কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করছে। এছাড়া কৃষকদের স্বাস্থ্যবান্ধব ও লাভজনক ফসলের দিকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।’
– লালমনিরহাট প্রতিনিধি

Comments are closed.