তালপাতার পাখা তৈরিতে ব্যস্ত নওগাঁর কারিগররা

সারাদেশে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। আর এই আধুনিক প্রযুক্তির যুগে তালপাতার হাতপাখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন নওগাঁর মহাদেবপুরের ভালাইন গ্রামের ৭০ থেকে ৭৫টি পরিবারের মানুষ।

একদিকে সকল জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় লাভ কম হলেও বাপ দাদার পেশা ধরে রাখতে কঠিন সংগ্রাম করতে হচ্ছে তাদের। তবে তালগাছ কমে যাওয়া, আর্থিক সমস্যা, আগের মত চাহিদা না থাকা এবং পরিশ্রমের তুলনায় লাভ কম হওয়া এই পেশার মূল সমস্যা। স্বল্প সুদে ঋণ এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে আরো এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন পাখা তৈরীর কারিগররা।

নওগাঁ শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার পশ্চিমে মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম ভালাইন। ওই গ্রামের দরিদ্র গ্রামীণ নারীরা দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তালপাতার হাতপাখা তৈরিকে এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সময়ের পরিক্রমায় গ্রামটি এখন ‘পাখাগ্রাম’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। তালপাতা দিয়ে তৈরি হাতপাখা থেকে অনেকের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। পুরুষরা শুধু তালপাতা নিয়ে এসে শুকানোর পর পরিষ্কার করে দেয়। এরপর সাংসারিক কাজের পাশাপাশি গৃহবধূরা পাখাকে সুই-সুতা দিয়ে সেলাই ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করেন।

হাতপাখার আরেক কারিগর সালেহা বেগম ও নাসরীন আক্তার বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার এসে তাদের তৈরি হাতপাখা কিনে নিয়ে যায়। তাল পাতার সাথে বাঁশের খিল, সুতা ও রং মিশিয়ে হাতপাখা তৈরি করা হয়। তবে লাভের পরিমাণ আগের তুলনায় কম। তাই সরকারের কাছে সহযোগিতা অথবা সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার জোর দাবী তাদের।

তাল পাখার ব্যবসায়ী মিস্টার আলী বলেন, তারা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এ ব্যবসা করছেন। প্রতিটি পাখা কিনতে হয় ৫ টাকায়। তাল পাতাকে সুন্দর করে সাইজ করে রং করা পর্যন্ত আরো খরচ পরে আরো দেড় টাকা। সব মিলিয়ে খরচ পড়ে ৮-৯ টাকা। আর প্রতিটি পাখা বিক্রি হয় ১০-১১ টাকায়। এসব পাখা দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ঢাকার ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায়।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন বিসিক নওগাঁ এর উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন বলেন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সাথে যারা যুক্ত তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হয়ে থাকে। পাখা তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা আরো বড় পরিসরে আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহজ কিস্তিতে ঋণ পেতে পারে এমন আশ্বাস দেন তিনি।

– নওগাঁ প্রতিনিধি

You might also like

Comments are closed.