‘ইন্টার-পাস’ করা হলো না বার্সার

১৯৫৫ সাল থেকে শুরু হওয়া ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের আসর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বহু নাটকীয়তা দেখেছে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত সাত দশকের এই যাত্রায় দেখেছে বহু উত্থান-পতন। তবে সান সিরোতে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ইন্টার মিলান ও বার্সেলোনা দেখিয়েছে বিরল এক দৃশ্য।

অবশ্য শুধু সান-সিরো না। বার্সেলোনা এবং ইন্টার মিলান দুই লেগ মিলিয়েই উপহার দিয়েছে ধ্রুপদী ফুটবলের লড়াই। বার্সেলোনায় ৩-৩ গোলে ড্রয়ের পর মিলান শহরে দুই দলের লড়াই শেষ হলো ৪-৩ গোলে। যেখানে শেষ হাসিটা ইন্টারের। দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ গোলের অ্যাগ্রিগেটে নেরাজ্জুরিরা চলে গেল ১ জুনের ফাইনালে।

তবে ম্যাচশেষে কপালটা পুড়ল বার্সেলোনার। সান সিরোয় ইন্টার-পরীক্ষায় এবারও পাস করা হলো না দলটার।

প্রথমার্ধে শুরুটা করে ইন্টার, বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল তারা শুরু থেকেই। হাইলাইন ডিফেন্স আর ফুলব্যাকদের ওভারল্যাপিং করানোর সাহসী কৌশল বেছে নিয়েছিলেন সিমোনে ইনজাগি। তা শুরু থেকেই বার্সেলোনাকে চাপে ফেলে দেয়।

ম্যাচের ২১ মিনিটে ফেদেরিকো দিমারকোর ট্যাকল ও নিখুঁত থ্রু বল পেয়ে একা এগিয়ে যান ড্যানজেল ডামফ্রিজ। তিনি সামনে থাকা একমাত্র বাধা—গোলরক্ষক—কে পাশ কাটিয়ে বল বাড়িয়ে দেন লাওতারো মার্তিনেজের পায়ে। মার্তিনেজ এর আগে বল স্পর্শ করেছিলেন মাত্র তিনবার, কিন্তু এই চতুর্থবারে সহজ ফিনিশে ইন্টারকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন।

প্রথমার্ধের একেবারে শেষ সময়ে, মিখিতারিয়ানের নিখুঁত পাস থেকে বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন মার্তিনেজ। পেছন থেকে কুবারসির ট্যাকল প্রথমে মনে হয়েছিল ক্লিন, কিন্তু ভিএআর জানায়, ফাউলটি হয়েছে বক্সের ভেতরে। পেনাল্টি শটে হাকান চালহানওগলু গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। তখন মনে হচ্ছিল ইন্টার বুঝি হেসেখেলেই ম্যাচটা জিতবে।

কিন্তু বার্সেলোনা তো এমন এক দল, যাদের আত্মবিশ্বাসই তাদের অস্ত্র। পিছিয়ে থেকেও তারা কখনও পিছু হটে না, অন্তত এ মৌসুমে তো বটেই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তারা ঘুরে দাঁড়ায়। প্রথমে জেরার্দ মার্তিনের ক্রস থেকে এরিক গার্সিয়ার অসাধারণ ভলিতে একটি গোল এবং কয়েক মিনিট পরই আবার সেই মার্তিনের ক্রস, এবার হেডে গোল করেন দানি অলমো। তৎক্ষণাৎ ম্যাচে ভারসাম্য ফিরে আসে। এরপর যখন ম্যাচের ৮৭ মিনিটে রাফিনিয়ার দারুণ গোলে ৩-২ তে এগিয়ে গেল বার্সেলোনা, মনে হচ্ছিল ইন্টারের স্বপ্ন বুঝি এখানেই থেমে যাবে।

কিন্তু সেই স্বপ্ন আবার বাঁচিয়ে তুললেন ডেনজেল ডামফ্রিজ। ৯৩ মিনিটে ডান দিক থেকে প্রবল ছুটে এসে বল বাড়িয়ে দেন অভিজ্ঞ ফ্রান্সেসকো আচেরবির দিকে, যিনি কোনো দ্বিধা না করে বল তুলে দেন জালে। ৩-৩। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়ের শুরু থেকেই দুদলের মধ্যে এক অসম্ভব নাটকীয় উত্তেজনা কাজ করছিল। দুই দলের খেলোয়াড়দের ক্লান্তি স্পষ্ট, কিন্তু খেলার গতি এতটুকু কমেনি। এই সময়েই আসে রাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ম্যাচের ৯৯ মিনিটে বল পেয়ে যান দাভিদে ফ্রাত্তেসি। বিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ভিড়ে তিনি সময় নেন, ঠান্ডা মাথায় লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিখুঁত শটে বল পাঠিয়ে দেন পোস্টের কোনায়। পুরো সান সিরো তখন কেঁপে উঠেছে গর্জনে।

শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনা বেশ কয়েকটি চেষ্টা করেছিল, এমনকি শেষ মুহূর্তে তাদের একটি সম্ভাব্য পেনাল্টি বাতিল করে দেয় ভিএআর। গোল আর তাই হয়নি, বার্সারও ইন্টার পাশ করা হয়নি। ইন্টার তাতে চলে যায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে, ৩ বছরে দ্বিতীয় বারের মতো।

You might also like

Comments are closed.