টানা ৪৮ ঘণ্টার চেষ্টায় সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের ধানসাগর স্টেশন সংলগ্ন তেইশের ছিলা শাপলার বিল এলাকার আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। টানা প্রায় ৪৮ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকালে আগুন নেভানো সম্ভব হয়।

ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর রায় এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, রাতভর আমরা কাজ করেছি। এখন চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ চলছে। সকাল নয়টার দিকে জোয়ার এলে আবার পাম্প চালিয়ে পানি ছেটানো হয়। এখন পর্যন্ত কোথাও আগুনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আমরা আশা করছি, আগুন পুরোপুরি নিভে গেছে। তবে, আরও নিশ্চিত হতে তল্লাশি চলছে এবং চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণে ড্রোন ব্যবহার করা হবে।

এদিকে আজ সকাল আটটার দিকে ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবকদের শুকনো ভোলা নদী পার হয়ে আগুন লাগা এলাকার দিকে যেতে দেখা গেছে। সেখানে পৌঁছে তারা তেইশের ছিলা শাপলার বিল এলাকা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করছেন। যেন নিশ্চিত হওয়া যায়, কোথাও ধোঁয়া বা সুপ্ত আগুন আছে কিনা।

বিপুলেশ্বর রায় বলেন, যদি কোথাও আগুনের অস্তিত্ব পাওয়া না যায়, তাহলে দাপ্তরিকভাবে সুন্দরবনের আগুন সম্পূর্ণ নেভানোর ঘোষণা দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে খুলনা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার এসএম আরিফুল হক বলেন, রাতভর মনিটরিং করেছি, তবে কোথাও আগুন পাওয়া যায়নি। আমাদের দল এখনো বনের ভেতরে চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ করছে। বন বিভাগও তাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, সারা রাত আগুন নেভানোর কাজ চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে না। এই মুহূর্তে কোথাও দৃশ্যমান আগুন বা ধোঁয়া নেই। তবে আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে তারপর ঘোষণা দেব।

এর আগে, শনিবার ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী বন টহল ফাঁড়ির টেপার বিল এলাকায় আগুন লাগে, যা রোববার সকালে নিভিয়ে ফেলা হয়। পরে বনবিভাগ ড্রোন দিয়ে সুপ্ত আগুন বা ধোঁয়ার সন্ধান করে। তখন কয়েক কিলোমিটার দূরে তেইশের ছিলা শাপলার বিলে নতুন আগুনের অস্তিত্ব ধরা পড়ে।

এরপর বন বিভাগ, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক, ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি) ও কমিউনিটি প্যাট্রল গ্রুপ (সিপিজি) সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। আগুন যেন আরও না ছড়ায় সেজন্য ফায়ার লাইন তৈরি করা হয়। প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ভোলা নদীতে পাম্প বসিয়ে পানি ছিটানো শুরু করে ফায়ার সার্ভিস ও বনবিভাগ। নদীতে পানির স্বল্পতা ও ভাটার সময় শুকিয়ে যাওয়ায়, টানা পানি ছিটানো সম্ভব হয়নি। এতে সোমবার রাত পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস ও বনবিভাগকে কাজ চালিয়ে যেতে হয়।

বনবিভাগ এখনো আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করেনি। স্থানীয়দের মতে, শাপলার বিল ও কলমতেজী এলাকার প্রায় ১০ একর বনভূমি আগুনে পুড়ে গেছে।

 

You might also like

Comments are closed.