‘নিরাপদ সম্পদ’: বিশ্ববাজারে ফের বাড়ছে স্বর্ণের দাম

ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকে পড়ায় বিশ্ববাজারে ফের লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। এতে স্বর্ণের দাম আরও বাড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮ দশমিক শূন্য ৮ ডলারে। যা দিনের শুরুতে পৌঁছেছিল রেকর্ড ৩ হাজার ১২ দশমিক শূন্য ৫ ডলারে। আর ফিউচার মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ১৭ দশমিক ৬০ ডলারে বেচাকেনা হচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক উদ্বেগ থেকে মুক্তি পেতে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন। এতে স্বর্ণের দাম শুক্রবার (১৪ মার্চ) প্রতি আউন্সে তিন হাজার ডলারের রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে যায়।

বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণকে নির্ভরযোগ্য হেজিং টুল হিসেবে দেখছেন উল্লেখ করে রয়টার্স আরও জানায়, শুল্ক যুদ্ধের পাশাপাশি, মার্কিন ডলারের দুর্বলতাও স্বর্ণের দামের জন্য বড় সহায়ক। জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে নিরাপদ আশ্রয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বর্ণের দাম রেকর্ড ১৪ বার বেড়েছে।

ম্যারেক্স বিশ্লেষক এডওয়ার্ড মেইর বলেন, ডলারের দুর্বলতা ও অব্যাহত শুল্ক অনিশ্চয়তার কারণে স্বর্ণের দাম ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। আর হেরিয়াস মেটালস জার্মানির একজন মূল্যবান ধাতু ব্যবসায়ী আলেকজান্ডার জাম্পফে বলেন, ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, বাণিজ্য শুল্ক ও আর্থিক বাজার অনিশ্চয়তার মধ্যে বিনিয়োগকারীরা স্থিতিশীলতা খুঁজছেন। যা তারা স্বর্ণে খুঁজে পাচ্ছেন। এতে পরিস্থিতি এখনও ইঙ্গিত দেয় যে, স্বর্ণের ঊর্ধ্বমুখী গতি এখনও শেষ হয়নি।

এদিকে সোমবার (১৭ মার্চ) গাজায় ফের ইসরাইলি হামলার প্রভাবে স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা আরও বাড়তে বলে জানিয়েছেন ক্যাপিটাল ডটকমের আর্থিক বাজার বিশ্লেষক কাইল রোডা। তিনি বলেন, ইসরাইলের বিমান হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। যা স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে যে হারে দাম বাড়ছে, এতে যে কোনো সময় প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। আর বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে এর প্রভাব পড়ে দেশের বাজারেও। তাই যে কোনো সময় দেশের বাজারেও দাম সমন্বয় করা হতে পারে।

দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সে হিসেবে সবশেষ গত ১৬ মার্চ দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সে সময় ভরিতে ২ হাজার ৬১৩ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।

এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৭৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩ হাজার ৪৭১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা কার্যকর হয়েছিল গত ১৭ মার্চ থেকে।

এ নিয়ে চলতি বছর ১৪ বার দেশের বাজারে সমন্বয় করা হলো স্বর্ণের দাম। যেখানে দাম বাড়ানো হয়েছে ১০ বার, আর কমেছে মাত্র ৪ বার। আর ২০২৪ সালে দেশের বাজারে মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। যেখানে ৩৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছিল, আর কমানো হয়েছিল ২৭ বার।

এদিকে, স্বর্ণের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে বাড়ছে অন্য ধাতুর দামও।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্পট মার্কেটে রুপার দাম প্রতি আউন্সে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩.৮৯ ডলারে। এছাড়া প্লাটিনামের দাম শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০৪.৬৫ ডলারে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.