যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি পুতিন, কুরস্ক পুনরুদ্ধার রাশিয়ার

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে রাশিয়া সম্মত। তবে যেকোনো যুদ্ধবিরতিতে সংঘাতের মূল কারণগুলোর সুরাহা করতে হবে। এ ছাড়া অনেক বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে হবে।

অন্যদিকে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ, রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা এবং ইউক্রেনকে ওয়াশিংটনের গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ বন্ধের মধ্যে রাশিয়া তাদের সীমান্তবর্তী কুরস্কের অধিকাংশ এলাকা ইউক্রেনের হাত থেকে দখল করেছে। গত এক সপ্তাহে এসব এলাকা ছেড়ে পিছু হটছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এর মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে পশ্চিমাদের সঙ্গে মস্কোর সবচেয়ে বৃহৎ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে আলোচনার পর বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ক্রেমলিনে এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা শত্রুতা বন্ধের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত। কিন্তু আমরা এই সত্য থেকে এগিয়ে যাব যে এই যুদ্ধবিরতি এমন হওয়া উচিত হবে, যাতে এটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তির দিকে যাওয়া যায় এবং এই সংকটের মূল কারণগুলো দূর হয়।’

২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে অগ্রসর হচ্ছে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধ চান তিনি।

এর আগে গত বুধবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, তিনি আশা করেন, ক্রেমলিন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাবে সম্মত হবে। ইতিমধ্যে ইউক্রেন এতে সমর্থন জানিয়েছে।

যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের প্রচেষ্টার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘ধারণাটি নিজেই সঠিক এবং আমরা অবশ্যই এটিকে সমর্থন করি। কিন্তু এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যা আমাদের আলোচনা করা দরকার। আমি মনে করি, আমাদের মার্কিন সহকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলা উচিত।’

পুতিন বলেন, তিনি ট্রাম্পকে ফোন করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই সংঘাতের অবসানের ধারণাকে সমর্থন করি।’

কুরস্ক পুনরুদ্ধার : কুরস্ক হাতছাড়া হওয়ায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ব্যাকফুটে চলে গেল ইউক্রেন। এ অবস্থায় মার্কিন অস্ত্র সরবরাহ ও গোয়েন্দা সহযোগিতা বন্ধের মধ্যে অঞ্চলটি ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। অবশ্য মঙ্গলবার রাত থেকে এ সহযোগিতা আবার চালুও করে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা এগিয়ে নিতে মার্কিন প্রতিনিধি দল মস্কোয় পৌঁছেছে। এর আগে রিয়াদে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদের সাড়ে ৯ ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক হয়।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) আলজাজিরা জানায়, হোয়াইট হাউস ইউক্রেনে সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা বন্ধ ঘোষণার পর ৬ মার্চ কুরস্ক পুনরুদ্ধার অভিযান জোরদার করে রাশিয়া। ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ জানান, রুশ বাহিনী অন্তত ৩২ বার কুরস্কে হামলা চালায়। তারা ড্রোন দিয়েও হামলা করেছে। ৭ মার্চ তারা সীমান্তবর্তী সুমি শহর দখলে নেয়। একসময় পেছন দিক থেকে এসে কুরস্কে থাকা ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে এবং সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

পরদিন ৮ মার্চ রুশ বাহিনী উত্তর সুদজার বিস্তীর্ণ এলাকার বসতির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এটি ছিল কুরস্কে ইউক্রেনীয় বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডেইলি টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরোপুরি ঘিরে ফেলার আগে ইউক্রেন তাদের সব সেনা রাশিয়ার কুরস্ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে ইউক্রেনের কমান্ডার ইন চিফ ওলেকসান্দার সিরস্কি সোমবার বলেন, কুরস্ক পুরো ঘিরে ফেলার ঝুঁকি নেই।

গত মঙ্গলবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, তারা কুরস্কে শত কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে। এর মধ্যে কয়েক ডজন বসতিও রয়েছে। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বুধবার বলেন, সুদজা এরই মধ্যে মুক্ত হয়েছে। বিকেলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেশ কয়েক মাস পর কুরস্ক পরিদর্শন করেন। পরে ক্রেমলিন জানায়, পুনরুদ্ধার অভিযান চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

এ অবস্থায় ইউক্রেনকে যথাযথ গোয়েন্দা সহযোগিতা না দেওয়াকে দোষারোপ করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউক্রেনের সামরিক বিশ্লেষক পেত্রো সেরনিক বলেন, গত ৯ মে পুতিন আমাদের সেনাদের যাতে কুরস্ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার হয়, তার নির্দেশ দেন। যদি এটা না হতো, তাহলে তা পুতিনের জন্য আদর্শিক পরাজয় হতো। এটা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম রাশিয়ার কোনো এলাকা দখলে নেওয়ার ঘটনা।

ইউক্রেনের সরকারি সূত্র টাইম ম্যাগাজিনকে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সহযোগিতা বন্ধের কারণে রুশ বাহিনী এভাবে অগ্রসর হতে পেরেছে। ইউক্রেনের সেনারা রুশ বোমা হামলাকারী ও যুদ্ধবিমানের গিতিবিধি চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হন। পাশাপাশি সামরিক সহযোগিতা বন্ধ হওয়ারও প্রভাব পড়েছে।

এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি এগিয়ে নিতে বৃহস্পতিবার সকালে মস্কো পৌঁছেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল। তারা প্রাথমিকভাবে এক মাসের যুদ্ধবিরতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিয়েভ ও ওয়াশিংটন মনে করে, এই এক মাসের মাধ্যমে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট বলেন, রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করাতে আমাদের চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে উইটকফ মস্কো সফর করছেন।

দোনেৎস্কে রুশ হামলায় নিহত তিন : বিবিসি জানায়, ইউক্রেনের দোনেৎস্কে রুশ হামলায় তিনজন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে ওই অঞ্চলের প্রশাসনিক প্রধান ভাদিম ফিলেশকিন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, শতাধিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপর ঘটনায় দক্ষিণ খেরসনে এক বৃদ্ধ নিহত ও আরেকজন আহত হয়েছেন।

You might also like

Comments are closed.