হামাসকে নিরস্ত্র হয়ে গাজা ছাড়তেই হবে: ট্রাম্পের দূত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরবর্তী পর্যায়ের বন্দিবিনিময় ও যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা দরকার। যদি সংগঠনটি অস্ত্র ছেড়ে দিয়ে এবং গাজা ত্যাগ করার শর্ত মেনে নেয়, তাহলে সবকিছুই আলোচনার টেবিলে থাকবে।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েল-হামাসের সঙ্গে আলোচনার জন্য কাতারের উদ্দেশে রওনা হওয়ার এক দিন আগে সোমবার (১০ মার্চ) উইটকফ বলেন, অস্ত্র ত্যাগ করে গাজা ছেড়ে যাওয়া ছাড়া হামাসের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।
উইটকফ আরও বলেন, যদি তারা (হামাস) চলে যায়, তাহলে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিচুক্তির সব সম্ভাবনা উন্মুক্ত থাকবে এবং এটাই তাদের করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চুক্তির পরবর্তী ধাপের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা দরকার, কারণ বন্দীদের যে অবস্থায় রাখা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য ও শোচনীয়।
এই প্রক্রিয়ায় কাতারের ‘অসাধারণ’ মধ্যস্থতাকারী ভূমিকার প্রশংসা করে উইটকফ বলেন, মিসর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
এর আগে ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল-১২ জানায়, বৈঠকে এই সপ্তাহে তথাকথিত ‘উইটকফ রূপরেখা’ নিয়ে আলোচনা হবে। যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবকে সমর্থন করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এর কৃতিত্ব দাবি করেনি। ওই রূপরেখার আওতায় মার্কিন-ইসরায়েলি নাগরিক ইদান আলেকজান্ডারসহ ১০ জীবিত বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে, বিনিময়ে ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে।
আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, দেশটির আলোচক দল গতকাল সোমবার দোহায় গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিনিধি দলটি ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের এক শীর্ষ কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে।
প্রতিনিধিদল দোহার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে, বন্দী ও নিখোঁজ পরিবার ফোরাম’ সরকারকে আহ্বান জানায়, যেন তারা আলোচকদের ‘সম্পূর্ণ ক্ষমতা’ দেয় যাতে বাকি ৫৯ জন বন্দীকে এক ধাপেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। এক বিবৃতিতে ফোরাম জানায়, ‘সব বন্দীকে ফিরিয়ে আনার একটি চুক্তি সম্ভব এবং এটি ইসরায়েল সরকারের দায়িত্ব, কারণ তারা এখনো হামাসের সুড়ঙ্গে বন্দী হয়ে আছে।
এদিকে, হামাস সোমবার জানিয়েছে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় ‘নমনীয়তা’ দেখাচ্ছে এবং মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছে। হামাস বলেছে, ‘আমরা মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টার সঙ্গে নমনীয় আচরণ করেছি এবং (মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড) ট্রাম্পের দূতের প্রচেষ্টার দিকেও নজর রাখছি। আমরা আসন্ন আলোচনার ফলাফলের অপেক্ষায় আছি এবং (ইসরায়েলকে) বাধ্য করতে চাই, যেন তারা সম্মত হয় এবং চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে অগ্রসর হয়।
সংগঠনটি জানায়, আলোচনার মূল বিষয় হলো—যুদ্ধের সমাপ্তি, ইসরায়েলি বাহিনীর গাজা থেকে প্রত্যাহার এবং গাজার পুনর্গঠন।
তিন ধাপের বন্দিবিনিময় যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্ব ১৯ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১ মার্চ শেষ হয়। তবে পরবর্তী ধাপে কোনো চুক্তি না হওয়ায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়নি। তবে উভয় পক্ষই পূর্ণমাত্রার সংঘর্ষে ফিরে যায়নি। সম্ভাব্য দ্বিতীয় ধাপের শর্ত নিয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি আলোচনা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ইসরায়েল মূলত এ বিষয়ে আলোচনায় যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি ব্যবস্থা চাইছে, যাতে যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ না করেও প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো যায় এবং আরও বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।