মাছ ধরা নিয়ে সংঘর্ষ, ধনু নদে ৩ জেলের লাশ

নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলায় জলমহালে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ চলাকালে গ্রামবাসীর ধাওয়ায় নিখোঁজ ৩ জেলের লাশ ধনু নদ থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে খালিয়াজুরীর লেপসিয়া নৌ-পুলিশ ও ময়মসিংহের ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ধনু নদীর নাওটানা অংশ থেকে ওই ৩ জনের লাশ উদ্ধার করে। খালিয়াজুরীর লেপসিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির আইসি জাহাঙ্গীর আলম খান এ তথ্য নিশ্চিত করছেন।

নিহতরা হলেন— মদন উপজেলার বাগজান গ্রামের রোকন মিয়া (৪৮), আটপাড়া উপজেলার স্বরমুসিয়া গ্রামের শহীদ মিয়া (৬০) ও কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি এলাকার হৃদয় মিয়া (২২)।

এদিকে, মদন উপজেলার ইয়াসিন (১৯) নামে এক যুবক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

নিহত রোকন মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া বলেন, আমার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যাকান্ডের বিচার চাই।

খালিয়াজুরীর লেপসিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির আইসি জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (৮ মার্চ) সকালে খালিয়াজুরীর হাওরে ইজারাকৃত জলমহালের মাছ শিকার করতে যায়। কয়েকটি উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পলো-জাল নিয়ে পিকআপ-অটোরিকশা করে রসুলপুর খেয়া ঘাটে জড়ো হয়। এসময় স্থানীয়রা বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়। উত্তেজিত লোকজন শতাধিক যানবাহন ভাংচুর করে আগুন দেয়। অন্যদিকে অপর পক্ষের লোকজন স্থানীয়দের বাড়ি ঘরে হামলা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ঘটনার পর মদন উপজেলার রুকন মিয়া, ইয়াসিন মিয়া, আটপাড়ার শহীদ মিয়া ও কেন্দুয়ার হৃদয় মিয়াসহ বেশ কয়েকজন নিখোঁজ হন।

ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার নুরুল আলম খান বলেন, আমাদের পাঁচজনের একটি ডুবুরি দল দুপুরে ধনু নদীতে দুপুর ১টার দিকে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। আধা ঘণ্টা পর শহিদ মিয়া নামে একজনের মরদে উদ্ধার করা হয়। কিছুক্ষণ পর হৃদয় মিয়া নামে আরেকজনের মরদেহ উদ্ধার হয়। অপর আরেকটি মরদেহ নৌ পুলিশের একটি দল লেপসিয়া বাজার এলাকায় ধনু নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে। আজকের মতো আমাদের উদ্ধার কাজ সমাপ্ত করে মদন উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে অবস্থান করছি। আরেকটি মরদেহ নদীতে ডুবন্ত অবস্থায় থাকতে পারে। আমাদের কন্ট্রোল রুম থেকে যদি নির্দেশনা দেওয়া হয়, তাহলে আগামীকাল ফজরের পর থেকে আবার উদ্ধার কাজ শুরু করব।

নেত্রকোনার সহকারী পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সাহেব আলী পাঠান বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। যদিও গতকাল দুই গ্রুপের লোকজন ঘোষণা দিয়ে মারামারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু প্রশাসনের হস্তক্ষেপের কারণে পরে আর কোনো ধরনের ঝামেলা হয়নি। সংঘর্ষের পর রসুলপুরসহ ওই এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.