রাশিয়ার চেয়ে ইউক্রেনকে সামলানো বেশি কঠিন হচ্ছে: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে শান্তিপ্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার পথে রাশিয়ার তুলনায় ইউক্রেনকে সামলানো বেশি কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি মনে করছেন।
ওয়াশিংটনে ওভাল অফিসে শুক্রবার (৭ মার্চ) সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর দেশ বেশ ভালো যোগাযোগ করছে। কিয়েভের তুলনায় মস্কোকে সামলানো তুলনামূলক সহজ হতে পারে।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেন, রাশিয়ার ব্যাংক খাতের ওপর বড় পরিসরে নিষেধাজ্ঞা দিতে চান তিনি। দেশটির পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপও করতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে কিয়েভের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর আগপর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
অন্য দিকে ইউক্রেনকে সব ধরনের সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র কিছু স্যাটেলাইট চিত্রে ইউক্রেনের প্রবেশাধিকার সাময়িক স্থগিত করেছে। মহাকাশ প্রযুক্তি সংস্থা ম্যাক্সার বিবিসিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এসব ঘটছে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডায় জড়ানোর সপ্তাহখানেক পর। ওই বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছিলেন, জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রকে অসম্মান করেছেন।
পরে ইউক্রেনকে দেওয়া সব ধরনের সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের বিনিময় বন্ধের নির্দেশ দেন ট্রাম্প। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোয় বড় পরিসরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় রুশবাহিনী।
এ হামলার জবাবেই ট্রাম্প হুঁশিয়ার করে দেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা আরও বিস্তৃত করা হবে। কেননা, বর্তমানে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়া এখনো পুরোদমে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে এর কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অন্য যে কারও মতোই আচরণ করছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনি (পুতিন) ইউক্রেনের ওপর আরও বেশি আঘাত করছেন। আমার মনে হয়, তাঁর অবস্থানে থাকা যে কেউ এখন সেটাই করবে।’
ট্রাম্প আরও বলেন, পুতিন যুদ্ধ বন্ধ করতে চান—এটা তাঁর বিশ্বাস। তবে ইউক্রেনের বিষয়ে একই কথা বলতে পারছেন না তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘ইউক্রেন মীমাংসার পথে আসতে চায়—এটা আমি জানতে চাই। তবে আমি সত্যিই জানি না যে ইউক্রেন সেটা আদতে চায় কি না।’
রাশিয়ার ব্যাংক খাতে বড় নিষেধাজ্ঞা দিতে চান ট্রাম্প, ভাবছেন শুল্কারোপের কথা
যুক্তরাষ্ট্র চায়, জেলেনস্কি ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি চুক্তি করবেন। সেই সঙ্গে তিনি (জেলেনস্কি) রাশিয়ার সঙ্গে দ্রুতই একটি শান্তি সমঝোতায় পৌঁছাবেন। কিন্তু জেলেনস্কি নিজ দেশের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চান। চুক্তির শর্তে বিষয়টি রাখতে চাপ দিচ্ছেন তিনি।
এ বিষয়ে শুক্রবার ট্রাম্প বলেন, ‘নিরাপত্তার নিশ্চয়তার বিষয়ে পরেও আলোচনা করা যাবে। এটা খুবই সহজ একটি অংশ।’
ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা আগামী সপ্তাহে সৌদি আরবে যাবেন। সেখানে তাঁরা ইউক্রেনের আলোচকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। ট্রাম্পের চাহিদা অনুযায়ী একটি শান্তি চুক্তি সইয়ের বিষয়ে তাঁদের মধ্যে কথাবার্তা হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট শুক্রবার বলেছেন, তিনি আশা করছেন, সৌদি আরবে আলোচনা ‘অর্থপূর্ণ’ হবে। জেলেনস্কি আরও বলেন, তাঁর দেশ যত দ্রুত সম্ভব শান্তির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি শান্তি অর্জনে ‘সুনির্দিষ্ট পর্যায়ের’ প্রস্তাবও দিয়েছেন।
‘অনুতাপ’ জানিয়ে জেলেনস্কি বললেন, ট্রাম্পের ‘বলিষ্ঠ নেতৃত্বের’ অধীনে কাজ করতে প্রস্তুত আছেন
ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘প্রতিদিন রুশ বাহিনীর নতুন নতুন হামলা এবং এখনকার বাস্তবতা এটাই প্রমাণ করে, রাশিয়াকে শান্তির জন্য বাধ্য করতে হবে।’
ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্যে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ানোয় দুঃখ প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য তিনি কাজ করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ সাংবাদিকদের বলেন, জেলেনস্কির কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওই চিঠিতে ‘ক্ষমা’ ও ‘কৃতজ্ঞতা বোধের’ কথা উল্লেখ রয়েছে।