যে আমলে রোজা হবে ‘জাহান্নামের ঢাল’
মুমিনের আসল সফলতা হলো- জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া। সুস্থ, বিবেকবান মানুষ দৃঢ়ভাবে প্রার্থনা করে জাহান্নাম থেকে মুক্তির। রোজা মানুষকে সেই নিকৃষ্ট জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে রাখে। হাদিস শরিফে রোজাকে ঢাল বলা হয়েছে। জাহান্নাম থেকে রক্ষার ঢাল। রোজা জাহান্নামের সম্মুখে ঢাল হয়ে প্রতিরোধ গড়ে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যুদ্ধের মাঠে ঢাল যেমন তোমাদের রক্ষাকারী, রোজাও তদ্রুপ জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল।’ (ইবনে মাজাহ: ১৬৩৯; বায়হাকি: ৪/২১০)
তবে, এ ঢালকে অক্ষুণ্ন রাখতে কিছু শর্ত পালন করা জরুরি। অর্থাৎ রোজা রেখে আপনাকে কিছু গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এজন্যই হাদিসে বলা হয়েছে- الصّومُ جُنّةٌ مَا لَمْ يَخْرِقْهَا ‘রোজা ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ না তা বিদীর্ণ করে ফেলা হয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৬৯০)
এই হাদিস আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে- শুধু উপোস থাকলেই রোজা পূর্ণতা পায় না। পাশাপাশি রোজার আদব রক্ষা কিংবা রোজা রেখে কিছু গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা চাই। যাতে এ ঢাল (রোজা) অক্ষুণ্ন থাকে; বিদীর্ণ না হয়।
আরেক বর্ণনায় এসেছে, নবীজিকে জিজ্ঞেস করা হলো- কীভাবে তা বিদীর্ণ হয়? নবীজি বললেন- بِكَذِبٍ، أَوْ غِيبَةٍ ‘মিথ্যা অথবা গীবতের মাধ্যমে।’ (আলমুজামুল আওসাত, তবারানি: ৪৫৩৬
গিবত ও মিথ্যা ইসলামে ভয়াবহ পাপগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ দুই গুনাহের কারণে রোজা ভেঙে না ঠিক, তবে রোজা হয়ে যায় মূল্যহীন। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, দুটি অভ্যাস এমন রয়েছে, এ দুটি থেকে যে বেঁচে থাকবে, তার রোজা নিরাপদ থাকবে—গিবত ও মিথ্যা। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৮৯৮০; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৬৭৪; মাজমাউল আনহুর: ১/৩৬০)
রমজান হলো তাকওয়া অর্জনের মাস। তাকওয়ার মূল কথা হলো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার মূল কারণই হলো তাকওয়া অর্জন। (সুরা বাকারা: ১৮৩)
তাই পবিত্র মাসে মিথ্যা, গিবত, কড়া কথা, ঝগড়া-বিবাদসহ যাবতীয় গুনাহ পরিত্যাগ করার বিকল্প নেই। অন্যথায়, শুধু ক্ষুধার্তই থাকা হবে, কোনো লাভ হবে না। হাদিসে এসেছে, مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزّورِ وَالعَمَلَ بِهٖ وَالجَهْلَ، فَلَيْسَ لِلهِ حَاجَةٌ أَنْ يَدَعَ طَعَامَهٗ وَشَرَابَهٗ ‘যে মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খসুলভ আচরণ ছাড়ল না, তার পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহিহ বুখারি: ৬০৫৭)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে, যাদের রোজা পালনের সার হলো তৃষ্ণার্ত আর ক্ষুধার্ত থাকা।’ (সুনানে তিবরানি: ৫৬৩৬) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোজা রমজানের দিনে যাবতীয় গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।