ঢাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা: বাড়তে দিয়ে লাগাম টানা অসম্ভব!

ঢাকার সড়কে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। অলিগলি-ছাপয়ে মহাসড়কও দখলে নেওয়া বাহন এখন নগরবাসীর গলার গাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। অবশ্য, সড়কে অবৈধ হলেও নিম্নবিত্ত মানুষের জীবিকার সহজ পথ তৈরি করা এই বাহনের লাগাম টানাই এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যদিও সরকার এ বিষয়ে নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু করেছে।

একজন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক বলেন, ‘সুপারভাইজারি চাকরি করে ১৮ হাজার টাকা বেতন পেতাম। এখন দিনে ৮০০থেকে ৯০০ টাকা ইনকাম করি। সংসার চলতেছে। ঋণ করতে হচ্ছে না।’

অন্য একজন রিকশাচালক বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো কলকারখানায় কাজকাম নেই। এখন মানুষ কী করবে? আইএ বিএ পাশ করে রিকশা চালাচ্ছে। একটা অটো রিকশা নিয়ে ভাড়া চালাচ্ছে।’

শুধু কি চালকেরই লাভ? এই ব্যবসায় সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও জড়িত।

একজন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক বলেন, ‘একটা পুলিশ দুইটা গাড়ি কিনে ভাড়া দিচ্ছে। তার বাজারের খরচ চলতেছে ওইটা দিয়ে। আগে এত গাড়ি ছিল না তো এখানে। এরকম অনেকেই ইনভেস্ট করে চার পাঁচটা গাড়ি কিনে ভাড়া দিচ্ছে। কয়দিন আগে এক স্যারের সাথে কথা হয়। তারও অটোরিকশা আছে, ভাড়া দেওয়া।’

তিন চাকার এই যানে মন্থর ঢাকা আরও মন্থর। দ্রুত গতির বাস, প্রাইভেট কারকে চলতে হচ্ছে ধীরগতিতে। রাস্তাঘাটে বের হয়ে পড়তে হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে।

একজন বাইকার বলেন, ‘এরা হুটহাট উল্টা রাস্তায় চলাচল করে। একদিন জিজ্ঞেস করছিলাম যে উল্টা যায় কেন। আমারে বলে যে, আমি যামুই, আপনি কী করবেন। পারলে ঠেকান।’

প্রাইভেটকারের একজন চালক বলেন, ‘যেখানে সেখানে ব্রেক করে। কোনো সিগন্যাল ছাড়াই হুট করে ব্রেক করে। আমি হার্ড ব্রেক না করলে লেগে যেত।’

ব্যাটারি রিকশার লাগাম টানতে সরকার নীতিমালার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেয়া হবে রেজিস্ট্রেশন।

ডিএমপির উপকমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘অটোরিকশাচালক এবং মালিক যারা আছেন তাদের সাথে বারবার বৈঠক করেছি। এবং এই সংক্রান্ত একটা নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। এক্ষেত্রে অটোরিকশার মালিকানা ও চালক সংক্রান্ত বেশকিছু নির্দেশনা প্রক্রিয়া চলছে। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে এক ব্যক্তি একাধিক অটোরিকশার মালিক হতে পারবেন না। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, যিনি মালিক তিনিই চালক।’

কিন্তু এমন সিদ্ধান্তে চালকরা কী বলছেন?

একজন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক বলেন, ‘আমার টাকা নাই, পয়সা নেই। কীভাবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় একটা গাড়ি নিব। গ্যারেজের মালিকের গাড়ি আছে। আমরা সেটা ভাড়া চালাই।’

ব্যাটারিচালিত রিকশা ব্যবহারে যাত্রীদের মাঝেও আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

একজন যাত্রী বলেন, ‘পায়েরটাই ভালো। কিন্তু এখন অটোতে চলতেছি, কারণ এটাতে দ্রুত যাওয়া যায়, সময় বাঁচে।’

যে ব্যবসায় সমাজের প্রভাশালীদের চোখ পড়েছে, বাস্তবতার সঙ্গে নীতিমালার বিস্তর ফারাক। তাহলে কী ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার শৃঙ্খলা ফেরানো সহজ হবে?

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.