তিস্তাপাড়ে ভুট্টা চাষে ভাগ্য বদল, বেড়েছে ফলন

ভুট্টা চাষে চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। অন্য ফসলের তুলনায় তিস্তাপারের ছয় জেলা-রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারীতে ভুট্টা চাষ বেড়েছে। এবার এক লাখ ২৬ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ২৪ হাজার ৪০০ টন। গত বছর ভুট্টা চাষ হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে—২০২৩ সালে ভুট্টা চাষ হয়েছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এ অঞ্চলের অধিকাংশ ভুট্টা চাষ হচ্ছে নদী তীরবর্তী গ্রাম ও চর এলাকায়।

সমতলে প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা হয় ২৫ থেকে ৩০ মন। চরাঞ্চলে উৎপন্ন হয় ৩৫ থেকে ৪০ মন। প্রতি বিঘায় ভুট্টা উৎপাদনে খরচ হয় ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমির ভুট্টা বিক্রি করে কৃষক পান ৩০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তার চর গড্ডিমারী এলাকার কৃষক নজর মাহদুম বলেন, ‘এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। আশা করছি, ৫৮০ থেকে ৬০০ মন ভুট্টা পাবো। গত বছর ১০ বিঘা জমিতে ৩৭২ মন ভুট্টা পেয়েছিলাম। প্রতি মন ১২ শ টাকায় ভুট্টা বিক্রি করে পাই চার লাখ ৪৬ হাজার ৪০০ টাকা। ভুট্টা উৎপাদনে খরচ হয়েছিল এক লাখ ৩০ হাজার টাকা।’

এ বছর তিনি প্রতি মন ভুট্টা ১৩ শ থেকে ১৪ শ টাকায় বিক্রির আশা করছেন। এ বছর ভুট্টা কেনার জন্য কয়েকজন ব্যবসায়ী তাকে অগ্রিম টাকা দিয়েছেন।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউড়া এলাকার কৃষক বিধান চন্দ্র সেন বলেন, ‘ভুট্টা বিক্রিতে সমস্যা হয় না। দামও সন্তোষজনক। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভুট্টার ফলন ভালো হবে। গত বছরের তুলনায় এ বছর দুই বিঘার বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। গত বছর ভুট্টা চাষ করেছিলাম সাত বিঘা জমিতে।’

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তিস্তার চর শৌলমারী এলাকার কৃষক দিলবর হোসেন বলেন, ‘ভুট্টা চাষ চরাঞ্চলে দারিদ্র কমিয়েছে। ভুট্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছি। ভুট্টা ব্যবসায়ী ও ফিড কোম্পানির প্রতিনিধিরা সরাসরি আমাদের কাছ থেকে ভুট্টা কেনেন। এ বছর তিনি নয় বিঘা জমি থেকে ৩৪৫ মন ভুট্টার ফলন আশা করছেন।

লালমনিরহাটের বাউড়া এলাকার ভুট্টা ব্যবসায়ী মোকসেদ আলী বলেন, কয়েকটি ফিড কোম্পানি এ অঞ্চলে ক্রয়কেন্দ্র খুলেছে। এসব কেন্দ্রে কৃষকরা সরাসরি ভুট্টা বিক্রি করেন। আমরা কৃষকদের কাছ থেকে ভুট্টা কিনে ফিড কোম্পানিগুলোয় সরবরাহ করি। গত বছর প্রতি মন ভুট্টা এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায় কিনেছিলাম। এ বছর ভুট্টার দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না।’

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক আফজাল হোসেন জানান, ‘ভুট্টা চাষে চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। রংপুর অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ভুট্টা হয় লালমনিরহাটের তিস্তার তীরবর্তী গ্রাম ও চরাঞ্চলে। ভুট্টা অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে।’

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.