যাকাতের ৮ খাতে অর্থব্যয়ের শরীয়ত নির্ধারিত বিধান- মানবকল্যাণের সঠিক পথ
যাকাতের ৮ খাতে অর্থব্যয়ের শরীয়ত নির্ধারিত বিধান- মানবকল্যাণের সঠিক পথ
যাকাতের ৮ খাতে অর্থব্যয়ের শরীয়ত নির্ধারিত বিধান- মানবকল্যাণের সঠিক পথ
ইসলামের এক অমূল্য বিধান হলো যাকাত, যা মুসলমানদের কর্তব্য হিসেবে তাদের সম্পদ থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ গরিব, অসহায় এবং সমাজের অন্যান্য প্রান্তিক জনগণের মধ্যে বিতরণ করার জন্য নির্ধারিত। যাকাত শুধু ধর্মীয় ফরজ ইবাদত নয়, বরং একটি সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বটে, যা সমাজে সম্পদবৈষম্য কমাতে সহায়তা করে এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতি, ভালোবাসা ও সাহায্যের মনোভাব সৃষ্টি করে।
ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, যাকাতের অর্থ ব্যয়ের জন্য ৮টি নির্দিষ্ট খাত নির্ধারিত রয়েছে, যা সূরা তওবা (৬০) আয়াতে আল্লাহ سبحانه وتعالى ঘোষণা করেছেন। চলুন, এবার প্রতিটি খাত বিস্তারিতভাবে জানি:
দরিদ্র
যাকাতের প্রথম খাত হলো দরিদ্র, যাদের জীবনে আর্থিক সংকট এবং অভাব রয়েছে। এর মধ্যে এমন মজুর বা শ্রমিকও অন্তর্ভুক্ত, যারা শারীরিক বা মানসিকভাবে কর্মক্ষম হলেও, প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে উপার্জনহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়াও, ছিন্নমূল মানুষ, শরণার্থী এবং সমাজের অন্য কোনো অনুন্নত শ্রেণীর মানুষও এই খাতের আওতায় আসে। যাকাত তাদের জীবনে একটি স্বস্তি এবং সাময়িক সহায়তা প্রদান করতে পারে।
অক্ষম
অক্ষম ব্যক্তি এমন কেউ, যে বয়স, রোগ বা পঙ্গুত্বের কারণে উপার্জন করতে অক্ষম। এই শ্রেণীর অন্তর্গত মানুষদের জীবিকা নির্বাহে সহায়তা দেওয়ার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায়। এর মধ্যে আশ্রয়হীন শিশুরাও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এসব মানুষদের জীবনযাত্রার জন্য যাকাতের সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ।
যাকাত ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মচারী
যাকাত সংগ্রহ এবং তার সঠিক বণ্টন নিশ্চিত করার জন্য যারা কার্যক্রম পরিচালনা করেন, তাদের বেতন বা ভাতা যাকাতের তহবিল থেকে প্রদান করা যাবে। তাদের কাজের জন্য এই অর্থ ব্যয় করা ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী বৈধ এবং তাদের প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
যাদের মন জয় করা প্রয়োজন
এটি সেই ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের জন্য যাদের ইসলাম গ্রহণে বা দ্বীনের প্রতি আস্থার প্রতি সহানুভূতি অর্জন করা প্রয়োজন। বিশেষত, যারা ইসলাম প্রচারের কাজে বাধার সম্মুখীন হন বা যারা নতুনভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তাদের সহায়তায় যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যেতে পারে। এতে দ্বীনের প্রসার ও শক্তিশালীকরণে সহায়তা হয়।
দাসমুক্তি
দাসমুক্তি বা বন্দিদের মুক্তির জন্য যাকাতের অর্থ ব্যবহার করা যাবে। এই খাতের আওতায় শুধুমাত্র শারীরিক দাস নয়, বরং যারা সামাজিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক দাসত্বের শিকার, তাদেরও মুক্তির জন্য যাকাত সহায়ক হতে পারে। এটি এমন একটি খাত, যা ন্যায় ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করে।
ঋণ মুক্তি
যারা নিজ জীবিকার জন্য ঋণ নিয়ে তা পরিশোধে অক্ষম, তাদের জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। এই খাতের আওতায় সেসব ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত, যারা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এবং ঋণ পরিশোধে তাদের সক্ষমতা নেই। এই ধরনের মানুষদের জন্য যাকাত একটি মুক্তির পথ হতে পারে।
আল্লাহর পথে
এটি সবচেয়ে ব্যাপক খাত, যার আওতায় ইসলামের প্রচার, সমাজকল্যাণমূলক কাজ এবং মানুষের ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়ের মধ্যে ধর্ম প্রচার, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং মানবিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এই খাতের মাধ্যমে যাকাত মুসলিম সমাজের উন্নতি, শান্তি এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে।
মুসাফির
মুসাফির হলো সেই পথিক বা যাত্রী, যিনি যাত্রাপথে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। যাকাতের অর্থ এই নিঃস্ব পথিকদের সহায়তা করতে ব্যবহার করা যাবে। তারা যাত্রাপথে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে পড়েন এবং তাদের জন্য যাকাত একটি উপযুক্ত সহায়তা হতে পারে
যাকাতের এই ৮টি খাতের মাধ্যমে ইসলামে একটি ব্যাপক এবং কার্যকরী সমাজকল্যাণ নীতি নির্ধারিত হয়েছে। যাকাতের ব্যয়ের উদ্দেশ্য শুধু গরিবদের সহায়তা নয়, বরং সমাজে শান্তি, ন্যায় এবং সমতা প্রতিষ্ঠা। ইসলামী অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থার ভিত্তিতে, যাকাত মানুষের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উন্নতি নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এর মাধ্যমে প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তি সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করে এবং একে অপরের সহায়তায় এগিয়ে আসে।