গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উড়িয়ে দিলেন নেতানিয়াহু

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস দিয়েছে, তা ‘একেবারেই অগ্রহণযোগ্য’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। হামাস যদি জিম্মিদের মুক্তি দিতে গড়িমসি করে, তাহলে ফের সামরিক অভিযান শুরুর হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।

সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নেতানিয়াহুর একটি রেকর্ডকৃত বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। সেখানে তিনি নিশ্চিত করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফের আহ্বান মেনে নিয়ে গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও ৫০ দিন বাড়িয়েছেন তিনি।

এর আগে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র মাস রমজান এবং ইহুদিদের ‘হলিডে অব পাসওভার’ উপলক্ষে ইসরায়েলকে গাজায় হামলা করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন স্টিভ ব্যানন।

রেকর্ডকৃত বক্তব্যে নেতানিয়াহু বলেন, “হামাস যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের জিম্মিদের নিজেদের কব্জায় রাখবে, ততদিন পর্যন্ত গাজায় স্থায়ী কোনো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। আমাদের শর্ত একটাই— আগে সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, তারপর অন্য আলোচনা।”

রমজানের শুরু থেকেই গাজায় খাদ্যবাহী ট্রাকের প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। ফলে গাজায় গত কয়েক দিন ধরে ভয়াবহ খাদ্য সংকট চলছে। রেকর্ডকৃত বক্তব্যে এজন্য নিজেদের দায়ও স্বীকার করেছেন নেতানিয়াহু।

“আমি সবাইকে একটা ব্যাপার স্পষ্ট করে দিতে চাই। এখন থেকে আর ফ্রি’তে খাবার পাওয়া যাবে না।”

২০২৩ সালে ইসরায়েরের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় ২৫১ জনকে।

অতর্কিত এই হামলার জবাব দিতে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। টানা ১৫ মাস ধরে চলা ভয়াবহ সেই অভিযানে গাজায় নিহত হয়েছেন ৪৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন লক্ষাধিক।

যুক্তরাষ্ট্র, মিসর এবং কাতারের ব্যাপক প্রচেষ্টা ও চাপের মুখে গত ১৯ তারিখ গাজায় ৩ পর্বের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে যেতে সম্মত হয় ইসরায়েল। এই চুক্তির প্রথম শর্ত ছিল— নিজেদের কব্জায় থাকা জিম্মিদের মধ্যে ৩৩ জনকে মুক্তি দেবে হামাস, তার বিনিময়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের একাংশকে ছেড়ে দেবে তেল আবিব।

চুক্তির শর্ত অনুসারে, প্রথম পর্বের স্থায়িত্ব হবে ৬ সপ্তাহ। তারপর দ্বিতীয় পর্ব শুরু। চুক্তির শর্ত অনুসারে এই পর্বে নিজেদের কব্জায় থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস এবং বিনিময়ে গাজা থেকে নিজেদের সব সেনা সদস্যকে প্রত্যাহার করে নেবে ইসরায়েল।

গত ২ মার্চ শনিবার ৬ সপ্তাহের প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে। এখন দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশের পালা। হামাসের পক্ষ থেকে চুক্তির দ্বিতীয় পর্ব শুরুর জন্য একাধিকবার আহ্বান জানানো হয়েছে, তবে ইসরায়েলের তরফ থেকে এখনও এ ব্যাপারে কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, নেতানিয়াহু সব জিম্মির মুক্তি দাবি করছেন ঠিকই কিন্তু যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায় থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে উত্তরণ চাইছেন না।

শেষে গত রোববার হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েল যদি গাজা থেকে তার সেনাদের সম্পূর্ণভাবে ফিরিয়ে নেয় এবং সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে, কেবল তাহলেই অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

হামাসের এই প্রস্তাবের উত্তরেই রোববার নেতানিয়াহুর এই রেকর্ডকৃত বক্তব্য প্রকাশ করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর।

ইসরায়েলের হিসেব অনুযায়ী, এখনও ৫৯ জন জিম্মিকে নিজেদের কব্জায় রেখেছে হামাস। তাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন এখনও বেঁচে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

 

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.