ভালো খেজুর চিনবেন যেভাবে

পুষ্টিগুণে ভরপুর খেজুর। এতে রয়েছে ভিটামিন, আঁশ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক। খেজুর একজন সুস্থ মানুষের শরীরে আয়রনের চাহিদার প্রায় ১১ ভাগই পূরণ করে। তা ছাড়া ইফতারে খেজুর রাখি আমরা কমবেশি সবাই। তাই বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ মাসে খেজুরের আমদানি ও বিক্রিও থাকে বেশি। তবে খেজুরের সব স্বাস্থ্যগত উপকারিতা পেতে হলে অবশ্যই বাজার থেকে ভালোমানের খেজুর কিনতে হবে। অনেকে ভালো খেজুর চিনতে পারলেও কীভাবে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়, তা জানে না। চলুন তাহলে জেনে নিন ভালো খেজুর চেনার উপায় ও সংরক্ষণ পদ্ধতি—

সতেজ ও তাজা খেজুরের চামড়া সাধারণত একটু কোঁচকানো হবে। তবে শক্ত হবে না। আবার ওপরের চামড়াও বেশি নরম হবে না। ওপরের চামড়া হবে চকচকে ও উজ্জ্বল।

খেজুরের গায়ে কোনোভাবেই স্ফটিকযুক্ত চিনি বা দানাদার কিছুর উপস্থিতি থাকবে না। যদি খেজুরের বাইরে তেল বা পাউডারজাতীয় কিছুর উপস্থিতি দেখেন, তাহলে বুঝবেন সেটি ভেজাল, মানহীন কিংবা নিম্নমানের খেজুর।

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে খেজুরের উৎপাদন হয়। তবে সব খেজুরের মান ভালো নয়। খেজুর উৎপাদনের দিক থেকে মিশর বিশ্বে প্রথম। এরপর ইরান ও সৌদি আরবের অবস্থান। চতুর্থ অবস্থানে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এরপর উৎপাদনে শীর্ষে আছে পাকিস্তান, আলজেরিয়া ও আফগানিস্তান। তাই খেজুর কেনার আগে কোন দেশেরটা কিনছেন, তা জেনে নিন।

বিভিন্ন ধরনের খেজুরের মধ্যে আজোয়া, আনবারা, সাগি বা সুগায়ি, সাফাওয়ি, মুসকানি, মরিয়ম খেজুর অন্যতম। আরও আছে খালাস, ওয়াসালি, বেরহি, শালাবি, ডেইরি, মাবরুম, ওয়ান্নাহ, সেফরি, সুক্কারি, খুদরি ইত্যাদি। এ দেশে আজোয়া ও মরিয়ম খেজুরের চাহিদা বেশি।

ভালো কিংবা খারাপ বা নিম্নমানের খেজুর কি না, তা যাচাই করার আরও এক উপায় হলো খেজুরে উপস্থিত মিষ্টির মাত্রা খেয়ে দেখা। খেজুরের প্রাকৃতিকভাবে থাকা মিষ্টি হবে সহনীয় পর্যায়ের। যারা অতিরিক্ত মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন না তারাও খেতে পারে এমন মিষ্টি থাকে উন্নতমানের খেজুরে। খেজুর খাওয়ার সময় যদি অতিরিক্ত মিষ্টি লাগে, তাহলে বুঝতে হবে সেখানে কৃত্রিম কিছু দেওয়া হয়েছে।

ভালো খেজুর চেনার আরও এক কৌশল হলো পিঁপড়া ও মাছির উপস্থিতি লক্ষ করা। যদি দেখেন খেজুরের সামনে মাছি ও পিঁপড়া ভিড় করছে, তার মানে সেটি ভালো খেজুর না। কারণ প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান যে মিষ্টি খেজুরে থাকে, তা কোনোক্রমেই পিঁপড়াদের আকৃষ্ট করবে না। যদি না তাতে কৃত্রিম চিনি বা মিষ্টি মেশানো হয়। এটি পরীক্ষা করতে ঘরের কোনো খোলা স্থানে খেজুর রাখুন। তারপর পরীক্ষা করুন।

খেজুর মুখে নেওয়ার পর ও খাওয়ার সময়ের মিষ্টি কমবেশি হলে বুঝতে হবে সেখানে কৃত্রিম কিছু আছে।

প্যাকিং করা খেজুর কেনাই সবচেয়ে ভালো। এ খেজুরগুলোর প্যাকেটে সাধারণত মেয়াদ লেখা থাকে। এ ছাড়া খোলা খেজুর কিনতে হলে খেয়াল রাখতে হবে খেজুরে যেন পচা গন্ধ, পোকা ধরা, বেশি কালছে, বেশি শুকিয়ে যাওয়া না হয়।

খেজুর সাধারণত দেড় বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে খেজুর ভালো রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ফ্রিজের নরমালে রাখা। ফ্রিজের নরমাল তাপমাত্রা খেজুর ভালো রাখে।

খেজুর সংরক্ষণের উপায়: সাধারণত রুমের তাপমাত্রাতেই ভালো থাকে খেজুর। তবে যদি তিন মাসের বেশি সময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে চান, তবে ফ্রিজার ব্যাগে ভরে রেখে দিন।

নরম খেজুর তুলনামূলক দ্রুত নষ্ট হয়। শক্ত খেজুর আবার বেশিদিন ভালো থাকে।

ফ্রিজে রাখলে এক বছর পর্যন্ত নিশ্চিন্তে খাওয়া যাবে ফলটি।

খেজুর ফ্রিজের বাইরে রাখলে এমন জায়গায় রাখবেন যেখানে সরাসরি রোদ পড়ে না। চুলার উত্তাপের আশপাশেও রাখবেন না খেজুরের বয়াম।

স্বাদ, গন্ধ ও রঙে পরিবর্তন দেখলে বুঝবেন খেজুর নষ্ট হয়ে গেছে।

 

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.