রমজানে করণীয় ও বর্জনীয়- আত্মশুদ্ধি ও সুস্থতার মাস
রমজানে করণীয় ও বর্জনীয়- আত্মশুদ্ধি ও সুস্থতার মাস
রমজানে করণীয় ও বর্জনীয়- আত্মশুদ্ধি ও সুস্থতার মাস
প্রিয় পাঠক,
আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা আবারও পবিত্র রমজান মাসের সন্ধ্যা পেয়েছি। এটি এমন একটি মাস, যা আমাদের আত্মিক, মানসিক ও শারীরিকভাবে পরিশুদ্ধ হওয়ার সুযোগ এনে দেয়। রমজান কেবল ধর্মীয় ইবাদতের মাসই নয়, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সুস্থতা ও সংযমের অনুশীলনেরও মাস। এই মাসে আমরা যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করি, তেমনি আমাদের দেহ ও মনকেও সুস্থ রাখার দিকে বিশেষ নজর দিই।
রমজান মাসে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো জানা এবং তা মেনে চলা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই লেখায় আমরা রমজানের ধর্মীয় ও স্বাস্থ্যগত দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করব, যাতে আপনি এই মাসটিকে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগাতে পারেন।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রোজার গুরুত্ব
রোজা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে একটি। এটি শুধু ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিবারণের মাধ্যম নয়, বরং এটি আত্মসংযম, সহানুভূতি ও আত্মশুদ্ধির একটি প্রশিক্ষণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রোজা ঢালস্বরূপ।” এটি আমাদেরকে গুনাহ থেকে দূরে রাখে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সাহায্য করে।
রোজার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
আধুনিক বিজ্ঞানও রোজার উপকারিতা স্বীকার করে। রোজা রাখলে শরীরে ‘অটোফেজি’ নামক একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা শরীরের ক্ষতিকারক টক্সিন দূর করে এবং কোষগুলোর পুনর্জন্ম ঘটায়। এছাড়াও রোজা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং হজমের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের মতো সংকটকালে রোজা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
ইফতার ও সেহরিতে কী খাবেন
ইফতারে খেজুর ও পানি দিয়ে শুরু করা সুন্নত। এটি শরীরকে দ্রুত শক্তি প্রদান করে। পুষ্টিকর খাবার যেমন শাকসবজি, মাছ, ডাল, ডিম, সালাদ এবং টক দই খান। ভাজাপোড়া ও ভারী খাবার যেমন পেঁয়াজু, চপ, বিরিয়ানি ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। সেহরিতে হালকা ও পুষ্টিকর খাবার যেমন খিচুড়ি, ডিম, কলা, খেজুর এবং দই খাওয়া উচিত। সেহরি বর্জন করবেন না, কারণ এটি রোজার শক্তি জোগায়।
রমজানের ইবাদত
রমজান মাসে নফল ইবাদতের সওয়াব ফরজের সমান। তাই এই মাসে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদ নামাজ, দোয়া ও জিকির করা উচিত। তারাবিহ নামাজ নিয়মিত পড়ুন এবং শবে কদরের রাতগুলোতে ইবাদতে মগ্ন থাকুন।
গীবত ও অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক থেকে দূরে থাকুন
রোজার মাসে গীবত, পরচর্চা এবং অহেতুক বিতর্ক থেকে দূরে থাকা জরুরি। রোজাদার হিসেবে আমাদের উচিত নিজের আচরণ ও কথাবার্তায় সংযমী হওয়া।
সমাজের দুর্বলদের সাহায্য করুন
করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন। রমজান মাসে তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করুন। অসহায়, এতিম ও গরিবদের সাহায্য করা এই মাসের অন্যতম করণীয়। যাকাত ও সদকা প্রদানের মাধ্যমে তাদের পাশে দাঁড়ান।
কোরআন তিলাওয়াত ও আত্মশুদ্ধি
কোরআন শুধু আধ্যাত্মিক পথনির্দেশকই নয়, এটি মানসিক ও শারীরিক নিরাময়ও বয়ে আনে। রমজান মাসে পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করুন এবং এর শিক্ষাগুলো জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করুন।
শেষ রমজানের মতো ইবাদত করুন
এই রমজানকে আপনার জীবনের শেষ রমজান হিসেবে বিবেচনা করুন। আত্মশুদ্ধি, ইবাদত ও ভালো কাজে সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।
রমজান মাস আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ উপহার। এই মাসে আমরা যেমন আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি, তেমনি আমাদের দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারি। আসুন, এই রমজানকে আমরা মানবিকতা, সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস হিসেবে গ্রহণ করি এবং এর প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই মাসের বরকত ও মাগফিরাত দান করুন। আমিন।