শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় রমজান শুরু হোক : আগে সালাম দিন, সম্পর্ক শক্ত করুন!

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় রমজান শুরু: আগে সালাম দিন, সম্পর্ক শক্ত করুন!

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় রমজান শুরু হোক : আগে সালাম দিন, সম্পর্ক শক্ত করুন!

রমজান, একজন মুসলিমের জীবনে এক বিশেষ এবং পবিত্র মাস। নবীজী (স) এর ভাষায়, “হে মানুষ! তোমাদের কাছে এসেছে অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন ও বরকতপূর্ণ একটি মাস।” এই মাসের প্রতি দিন, প্রতি মুহূর্তে রয়েছে আত্মশুদ্ধি এবং সৃষ্টির সেবার অপরিসীম সুযোগ। রমজানের সৌন্দর্য এবং দোয়া কবুলের সময়কালকে কাজে লাগিয়ে, আমরা সবাইকে শান্তি ও কল্যাণ কামনা করতে চাই। এবারের রমজানকে স্মরণীয় করে রাখতে, আসুন আমরা সবাই আগে সালাম দেয়ার মাধ্যমে পারস্পরিক শান্তি কামনার বাণীকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিই।

সালামের চিরন্তন বাণী

“আসসালামু আলাইকুম”—একটি সহজ অথচ অসাধারণ বাক্য। এর মধ্যে রয়েছে শান্তির অসীম শক্তি, যা সব জাতি ও ভাষার সীমানা অতিক্রম করেছে। মুসলিমদের জন্য এটি শুধুমাত্র একটি সম্ভাষণ নয়, বরং একটি দোয়া, যা শান্তি ও কল্যাণের বার্তা বহন করে। পাশ্চাত্যের হাই-হ্যালো বা অন্য কোনো সম্ভাষণ ছাপিয়ে, সালাম যুগযুগ ধরে শান্তির প্রতীক হয়ে থাকবে।

সালাম – আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের প্রিয়

আল্লাহ সালাম বিনিময় করতে ভালোবাসেন। নবীজী (স) বলেছেন, “সর্বত্র সালামের প্রচলন কর, শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে।” মেরাজে আল্লাহ প্রথম বাক্য হিসেবে সালামই নবীজীকে বলেছিলেন: “আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবীইয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহু।” এটি বিশ্বাসীদের জন্য একটি উপহার, যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবেন, তাদেরকেও সালাম দেয়া হবে (সূরা আহজাব : ৪৪)।

সালাম দেয়া সুন্নত

রসুলুল্লাহ (স) এর জীবনে সবচেয়ে বেশি চর্চিত বাক্য ছিল সালাম। মসনদে আহমাদ থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে, “তোমরা সবাইকে সালাম দিবে, প্রথম সুযোগে সালাম দাও, শান্তি পাবে।”

আল কোরআনে সালাম

কোরআনে বহু স্থানে সালামের গুরুত্ব উল্লেখিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:

“যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি সেদিন আমার প্রতি ছিল সালাম, যেদিন আমি মারা যাব আর যেদিন পুনরুত্থিত হবো সেদিনও থাকবে সালাম।” [সূরা মরিয়ম : ৩৩]

“উভয়কালেই নূহের প্রতি সালাম!” [সূরা সাফফাত : ৭৫-৭৯]

“হে নবী! বলো, সকল প্রশংসা আল্লাহর! আর সালাম তাঁর মনোনীত বান্দাদের প্রতি।” [সূরা নমল : ৫৯]

সালাম দিন সবাইকে

একবার, আব্দুল্লাহ ইবনে আমরসহ আরো কয়েকজন সাহাবী বসেছিলেন। এক ব্যক্তি নবীজী (স) কে প্রশ্ন করেছিলেন, “ইসলামে সর্বোত্তম কাজ কী?” নবীজী (স) বলেছিলেন, “পরিচিত অপরিচিত নির্বিশেষে সবাইকে সালাম দেয়া।” এটি আমাদের শিক্ষায় ভরে তোলে, কেননা কেউ আমাদের সালাম না দিলেও, আমরা তাদেরকে প্রথমে সালাম দিয়ে শান্তি ও কল্যাণের বার্তা পৌঁছে দিতে পারি।

শিশুদের সালাম দিন

বয়সী ব্যক্তিরা একে অপরকে সালাম দিয়ে থাকেন, কিন্তু আমাদের উচিত শিশুদেরও সালাম দেয়া শেখানো। এর মাধ্যমে শিশুদের শিষ্টাচারী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। নবীজী (স) সবসময় শিশুদের আগে সালাম দিতেন।

জড়তা ভাঙতে হবে

অনেক সময় আমরা সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে এক ধরণের জড়তা অনুভব করি। আমরা অপেক্ষা করি, আরেকজন আগে সালাম দেবে কিনা। কিন্তু সালাম দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি শান্তির এক উপায়। স্পষ্টভাবে এবং সুন্দরভাবে সালাম দিয়ে দিন, কারণ শান্তির কথা উচ্চারণ করতে কখনোই পিছপা হওয়া উচিত নয়।

সালাম দিন সর্বত্র

ঘর থেকে বেরোতে, ঘরে ফিরে, বা ঘুমানোর আগে, সবসময় সালাম দিন। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ দোয়া, যা আমাদের জীবনে শান্তি এবং বরকত নিয়ে আসে। সালামের জবাব দেয়াও গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, “তোমরা কমপক্ষে তার চেয়ে বেশি সম্মানসহকারে সালামের জবাব দেবে।” [সূরা নিসা : ৮৬]

শুদ্ধভাবে সালাম দিন

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কেননা সালাম হল একটি দোয়া। এটি সম্পূর্ণভাবে সুস্পষ্ট, সুন্দর উচ্চারণে দেয়া উচিত। যখন কেউ সালাম দেয়, তখন তাকে আন্তরিকভাবে এবং হাসিমুখে উত্তরে সালাম দিন।

বহুমুখী উপকার

সালাম শুধুমাত্র কুশল বিনিময় নয়, এটি আমাদের জীবনে অনেক উপকারে আসে। এটি মানসিক শান্তি প্রদান করে, সংকোচ ও অহমমুক্তি দূর করে, সবার প্রতি সম্মানবোধ সৃষ্টি করে, সম্পর্কের মধ্যে মমতা বৃদ্ধি করে এবং সবার মধ্যে একতা সৃষ্টি করে।

সালাম একটি ছোট শব্দ হলেও এটি শান্তি, সমৃদ্ধি এবং কল্যাণের একটি গভীর বার্তা বহন করে। এটি আমাদের মধ্যে ভালোবাসা এবং সহযোগিতার এক চিরন্তন বন্ধন তৈরি করে। আসুন আমরা এই রমজানে সবাইকে প্রথমে সালাম দিয়ে শান্তি ও কল্যাণের বাণী ছড়িয়ে দিই।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.