নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ সোমবার, সম্ভাব্য নাম ‘বিপ্লবী ছাত্রশক্তি’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে বেরিয়ে নতুন ছাত্রসংগঠন করতে যাচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের একটি অংশ। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মধুর ক্যান্টিন থেকে এর আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। সংগঠনটির নাম হতে পারে ‘বিপ্লবী ছাত্রশক্তি।’

আত্মপ্রকাশের দিনই ২৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা হতে পারে। সংগঠনটির বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শনিবার সংগঠনটির আত্মপ্রকাশের গুঞ্জন উঠলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচন, দলের নামসহ বিভিন্ন বিষয় অমীমাংসিত থাকায় আত্মপ্রকাশের দিন পেছানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন সাবেক সমন্বয়ক বলেন, রুদ্ধদ্বার আলোচনা চলছে। শীর্ষ নেতাদের কে কোন পদে থাকবেন তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তাছাড়া, দলের নাম ঠিক করা, কাঠামো কী হবে, কর্মপদ্ধতি কী হবে তা নিয়েও কাজ চলমান। তাছাড়া, দলের নাম ও কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন সাবেক সমন্বয়ক জানান, নতুন এ সংগঠনটির নেতৃত্ব বাছাইয়ে মেধাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ, রাষ্ট্র ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ, আদর্শিক ও কালচারাল এক্সট্রিমিজমের বাইনারি ভেঙে মধ্যমপন্থী ধারার রাজনীতিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, সংগঠনটির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সমন্বয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল বা মূল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে কোনো সম্পর্ক থাকবে না। দলটি কোনো লেজুরবৃত্তিক রাজনীতিতে জড়িত হবে না। কোনো ‘মাদার সংগঠনে’র এজেন্ডা বাস্তবায়ন বা কোনো রাজনৈতিক দলের কথামতো তারা সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে না।

বলা হচ্ছে সংগঠনটির আয়ের উৎস হবে অভ্যন্তরীণ নেতাকর্মীদের মাসিক চাঁদা। প্রয়োজন মাফিক শুভাকাঙ্ক্ষীদের থেকেও অনুদান সংগ্রহ করা হতে পারে।

সংগঠনটির নির্বাচনে ‘টপ টু বটম’ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। তাছাড়া সংগঠনের সম্ভাব্য কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী বয়স নির্ধারিত থাকবে। কোনো শিক্ষার্থী সংগঠনটিতে আসতে চাইলে তার বয়স সর্বোচ্চ ২৮ হতে পারবে। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির ক্ষেত্রে তার অনার্সে ভর্তির পর থেকে সাত বছর সময় হতে পারবে। তার মানে ছাত্র ব্যতীত কারো এই সংগঠনের কমিটিতে আসার সুযোগ পাবে না।

তাছাড়া, মূলধারার রাজনৈতিক পরিসরে নারীদের যে অনুপস্থিতি রয়েছে সেটিকে চিহ্নিত করে নারীর রাজনৈতিক মানদণ্ড বিনির্মাণ করা, রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ তৈরি করা এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নারীবান্ধব করে তোলার মাধ্যমে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান সুযোগের সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সংগঠনটি কাজ করে যাবে বলেও প্রত্যাশা নেতাদের।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত এমন একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দলের কাঠামোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতোই আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র চারটি পদ থাকছে।

আবু বাকের মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী সূত্রে জানা যায়, আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হওয়ার দৌড়ে আলোচনায় আছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। অন্যদিকে ঢাবির আহ্বায়ক পদের আলোচনায় রয়েছেন ৯ দফার ঘোষক আব্দুল কাদের।

তারা দুজনেই জুলাই অভ্যুত্থানে প্রথম সারির নেতা ছিলেন। বাকের ডিবি অফিসে আটক থাকা অবস্থায় নির্যাতনের শিকার এবং কাদের গোয়েন্দা নজর এড়িয়ে অভ্যুত্থানের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে যোগাযোগ করে ৯ দফা প্রণয়ন করেন যা পরে ১ দফায় রূপ নেয় এবং শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত করে।

অন্যদিকে, নতুন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন দুজন। তারা হলেন— বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক ১৮-১৯ সেশনের জাহিদ আহসান এবং সাবেক সমন্বয়ক ১৮-১৯ সেশনের তাহমিদ আল মুদ্দাসসির। ঢাবির সদস্য সচিব হিসেবেও আলোচনায় রয়েছে দুজনের নাম। তারা হলেন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের মহির আলম এবং ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের লিমন মাহমুদুল হাসান। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ও ঢাবির মুখ্য সংগঠক হিসেবে নাম এসেছে জাহিদ আহসান, তাহমিদ আল মুদ্দাসসির, হাসিব আল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনের।

এদিকে কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার শীর্ষ চার পদে কোনো নারী নেতৃত্ব দেখা না গেলেও মুখপাত্র হিসেবে দুই কমিটিতেই এককভাবে আলোচনায় রয়েছেন দুজন নারী শিক্ষার্থী। তারা হলেন— কেন্দ্রীয় মুখপাত্র হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের আশরেফা খাতুন এবং ঢাবি মুখপাত্র হিসেবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৯-২০ সেশনের রাফিয়া রেহনুমা হৃদি।

সার্বিক বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, আমরা চাইলেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে থেকে সব রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবো না। এমন অনেক কাজ আছে যা বৈষম্যবিরোধীতে থেকে করা সম্ভব না। তাই, সাধারণ ছাত্রদের দায়বদ্ধতা থেকে এই ছাত্র সংগঠনের সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সংগঠন কোনো লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে যাবে না। এর পদে আসতে চাইলে তাকে বৈষম্যবিরোধী বা অন্য সংগঠন থেকে পদত্যাগ করে আসতে হবে। কেউ চব্বিশকে ধারণ করে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে তারা চাইলে এই সংগঠনে যোগ দেবে। আমরা শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.