গান গেয়ে সঙ্গী খোঁজে তিমিরা!

 গান গায় তিমিরাও। তবে মন ভালো করতে কিংবা অন্যকে আনন্দ দিতে গান গায় না তারা। সমুদ্রতলে আপন মনে নিজ কণ্ঠে সুর তোলে সঙ্গীর খোঁজে। আবাক করার মতো বিষয় হলেও এমনি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। বালিন প্রজাতির হাম্পব্যাক তিমি নিয়ে গবেষণা করেন তারা। সম্প্রতি করা নতুন গবেষণাটিতে দেখা গেছে, হাম্পব্যাক তিমির গান মানুষের যোগাযোগের অনুরূপ কাঠামোগত প্যাটার্ন অনুসরণ করে। ইন্ডিয়া টুডে।

 

গবেষকদের দাবি, এ প্রজাতির তিমি শরীরের বিশেষ এক ধরনের ভয়েস বক্স বা স্বরের মাধ্যমে পানির নিচে গানের মতো শব্দ তৈরি করে থাকে। এই শব্দের মাধ্যমেই তার সঙ্গীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। নতুন গবেষণাটি শিশুরা কীভাবে মানুষের কথা শুনে শব্দ আবিষ্কার করে তার ওপর ভিত্তি করে তৈরি পদ্ধতিগুলোকে হাম্পব্যাক তিমির রেকর্ডিংয়ে প্রয়োগ করে। সেখান থেকেই কিছুটা একই ধরনের পরিসংখ্যানগত কাঠামো উন্মোচন করেন বিজ্ঞানীরা।

এর আগে সাউদার্ন ডেনমার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কোয়েন ইলিম্যানস বলেছেন, তিমির টিকে থাকতে শব্দের বিকল্প নেই। এই শব্দ ব্যবহার করেই তারা সমুদ্রে সঙ্গীকে খুঁজে বের করে। তিনি আরও বলেছেন, তিমির স্বরযন্ত্রের ওপরে ইংরেজি ইউ অক্ষরের মতো একটি চর্বির স্তর থাকায় বায়ু পুনর্ব্যবহার করার মাধ্যমে গান গাইতে পারে। এই গানেই দেখা মেলে সঙ্গীর। এরা পানির নিচে যোগাযোগের জন্য ৩০০ হার্জ পর্যন্ত স্বল্প-ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ ব্যবহার করে। এই মাত্রার আওয়াজ সমুদ্রে অপেক্ষাকৃত কম দ্রুত শোষিত হয়।

বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, স্তন্যপায়ী তিমিদের স্বরযন্ত্রে একটি অনন্য কাঠামো রয়েছে। এই কাঠামোটি তারা কথা বলা এবং সঙ্গী খোঁজার কাজে ব্যবহার করে। এ বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ডেনমার্কের গবেষকরা হ্যাম্পব্যাক তিমির রেকর্ডকৃত শব্দ বিশ্লেষণ করেছেন এবং এই শব্দ তৈরি করতে স্বরযন্ত্রের মধ্য দিয়ে কীভাবে বায়ু প্রবাহিত হয় তা উদ্ঘাটন করেছেন। গবেষক ইলিম্যানস বলেছেন, তিমির গান গাওয়ার এই রহস্য ভেদ করা আমাদের জন্য দারুণ রোমাঞ্চকর ছিল।

এছাড়া ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ডেনমার্কের জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কোয়েন অ্যালেমানস বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি, এই ইউ-আকৃতির কাঠামোটি স্বরযন্ত্রের ভেতরে একটি বড় ফ্যাটি কুশনের সঙ্গে ধাক্কা খায়। তিমিরা যখন তাদের ফুসফুস থেকে বাতাস এই কুশনের বাইরে ঠেলে দেয় তখন এটি কম্পন শুরু করে এবং এটি পানির নিচে খুব কম ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ উৎপন্ন করে।’ তবে গবেষক দলটি দাবি করেছে, বর্তমানে তিমিদের গান তথা যোগাযোগ সমুদ্রে মানুষের তৈরি শব্দের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.