গাজার নিয়ন্ত্রণ: ট্রাম্পের চাপ দৃঢ়ভাবে উপেক্ষা করলেন আবদুল্লাহ

গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নিতে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহকে চাপ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু বাদশাহ আবদুল্লাহ তা দৃঢ়ভাবে উপেক্ষা করেছেন। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের না সরিয়েই গাজা পুনর্গঠন করা হবে। এই বিষয়ে আরব দেশগুলো একমত।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে তারা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, গাজা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ও উপত্যকাটির বাসিন্দাদের স্থায়ীভাবে সরানোর পরিকল্পনা থেকে তিনি সরে আসবেন না।

ট্রাম্পের গাজা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার প্রস্তাবে আরব দেশগুলো এরই মধ্যে হতাশা প্রকাশ করেছে। তাঁর প্রস্তাব অনুযায়ী, পুনর্গঠনের জন্য গাজাবাসীকে প্রতিবেশী মিসর ও জর্ডানসহ আরও কয়েকটি দেশে পাঠানো হবে। সেখান থেকে তাঁদের আর গাজায় ফিরতে দেওয়া হবে না। গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্রসৈকতে’ রূপ দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা গাজা নিতে যাচ্ছি। এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, আমরা এটাকে ঢেলে সাজাব। শেষ পর্যন্ত আমরা এটা ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করতে যাচ্ছি, যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।’ তাঁর এই পরিকল্পনা ওই অঞ্চলে ‘শান্তি’ বয়ে আনবে বলেও মন্তব্য করেন রিপাবলিকান পার্টির এই প্রেসিডেন্ট।

জবাবে ফিলিস্তিনিদের গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে বাস্তুচ্যুত করার বিরুদ্ধে জর্ডানের ‘অবিচল অবস্থান’ পুনর্ব্যক্ত করেছেন বাদশাহ আবদুল্লাহ। সংবাদ সম্মেলন শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘এটাই আরবদের একীভূত অবস্থান। ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত না করে গাজা পুনর্গঠন করা এবং ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সবার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

জর্ডানের বাদশাহের বিরোধিতা সত্ত্বেও ট্রাম্প মনে করেন, জর্ডানের পাশাপাশি মিসরও শেষ পর্যন্ত বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীকে নিতে সম্মত হবে। দেশ দুটি অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তার জন্য ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভরশীল।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি জর্ডানে আমাদের এক টুকরো জমি থাকবে। আমি বিশ্বাস করি মিসরেও আমাদের এক টুকরো জমি থাকবে। [মধ্যপ্রাচ্যের] অন্য কোথাও আমাদের জন্য সামান্য কিছু জমি থাকতে পারে। আমি মনে করি, আমরা যখন আলোচনা শেষ করব, তখন আমাদের জন্য এমন একটি স্থান থাকবে, যেখানে তারা [গাজাবাসী] সুখ-শান্তি ও নিরাপদে বসবাস করতে পারবে।’

ট্রাম্প জর্ডানের সহায়তাও বন্ধের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কথা প্রসঙ্গে বলি, আমরা জর্ডানকে বিপুল অর্থ দিয়েছি, মিসরকেও দিয়েছি। এর দ্বারা আমি কিন্তু তাদের হুমকি দিচ্ছি না। আমি মনে করি আমরা সে সবের ঊর্ধ্বে।’

বাদশাহ আবদুল্লাহ ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগেও গাজাবাসীকে সরিয়ে উপত্যকাটি দখলের ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন। গাজা দখলের প্রস্তাবটি প্রকাশ করার পর প্রথম আরব নেতা হিসেবে বাদশাহ আবদুল্লাই মঙ্গলবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ও বাদশাহ আবদুল্লাহ উভয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিলেন। তবে গাজা নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য তাকে কিছুটা অপ্রস্তুত করেছে বলে মনে হয়েছে।

কথা বলার একপর্যায়ে গাজাবাসীদের নেওয়ার ব্যাপারে বাদশাহ আবদুল্লাহ প্রতিশ্রুতি আদায় করতে চাচ্ছিলেন ট্রাম্প। তখন জর্ডানের বাদশাহ বলেন, ‘আমাদের দেশের জন্য যেটা সর্বোচ্চ মঙ্গল সেটাই করা হবে। হ্যাঁ, গাজার দুই হাজার শিশুকে আমরা চিকিৎসার জন্য জর্ডানে নেব।’ ট্রাম্প তার এই প্রস্তাবের প্রশংসা করেন।

বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেন, ‘পাল্টা প্রস্তাব নিয়ে আরব নেতারা একে একে ওয়াশিংটনে আসবেন। এই কাজ কীভাবে করলে সবার জন্য ভালো হয় তা খুঁজে বের করাই মূল বিষয়।’ এসব কথা বলার সময় তার চেহারায় অস্বস্তি ফুটে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি এবং বাদশাহ আবদুল্লাহর ছেলে ও যুবরাজ হুসাইন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.