গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়াতে ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ

ফিলিস্তিনিদের ‘স্বেচ্ছায় গাজা থেকে অন্য দেশে চলে যাওয়ার’ বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে সেনাদের নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এ নির্দেশনা জারি করেছেন তিনি।ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকচ করে দেওয়ার পর এ নির্দেশনা এল।

গত মঙ্গলবার ট্রাম্প গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদেরকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাঠিয়ে উপত্যকাটি যুক্তরাষ্ট্রের দখলে নেওয়ার কথা বলেন। আর দখলের পর এটিকে ‘সাগর সৈকতের’ অবকাশযাপন কেন্দ্রে পরিণত করার বিস্ময়কর পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এতে মধ্যপ্রাচ্য ও এর বাইরে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ বলেন, ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে যাওয়া নিয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে তাঁর দেশের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ইসরায়েলি বাহিনীর নজিরবিহীন তাণ্ডবে ১৫ মাসে উপত্যকাটির প্রায় পুরোটা বিধ্বস্ত হয়েছে।

কাৎজ বলেন, ‘গাজা থেকে সেখানকার বাসিন্দাদের স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার বিষয়টি কার্যকর করার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে আইডিএফকে (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) আমি নির্দেশ দিয়েছি। তাঁদের গ্রহণে রাজি, এমন যেকোনো দেশে তাঁরা (গাজার বাসিন্দারা) চলে যেতে পারেন।’

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজা দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করলে ফিলিস্তিনিরা ছাড়াও তাঁর পশ্চিমা সমালোচকেরা এর তীব্র প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা জানান। তাঁদের পাশাপাশি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা বলছে, এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হবে জাতিগত নির্মূলের শামিল ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

অথচ তাঁর এ পরিকল্পনাকে ‘সবাই পছন্দ’ করেন বলে জোর দাবি করেছেন ট্রাম্প। তবে কীভাবে ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে গাজা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করেননি তিনি।

গাজা থেকে সেখানকার বাসিন্দাদের স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার বিষয়টি কার্যকর করার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে আইডিএফকে (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) আমি নির্দেশ দিয়েছি। তাঁদের গ্রহণে রাজি, এমন যেকোনো দেশে তাঁরা (গাজার বাসিন্দারা) চলে যেতে পারেন।
ইসরায়েল কাৎজ, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী

অবশ্য তুমুল সমালোচনার মুখে ট্রাম্প প্রশাসন দৃশ্যত আগের অবস্থান থেকে কিছুটা নমনীয় হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, গাজার অধিবাসীদের যেকোনো ধরনের অপসারণ হবে সাময়িক।

এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনাকে আবারও জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। নিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ শেষে ইসরায়েল গাজা উপত্যকাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে।’

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘(গাজায়) যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সেনার দরকার হবে না! অঞ্চলটিতে স্থিতিশীলতাই প্রাধান্য পাবে!!!’

একই দিন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ‘কয়েক বছরের মধ্যে উত্থাপিত প্রথম কোনো সত্যিকারের ধারণা’ বলে আখ্যায়িত করেন।’ এটি গ্রহণ করার মতো খুবই ভালো একটি ধারণা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত ওই ভিডিও বার্তায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নেতানিয়াহু এ-ও বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর অনুষ্ঠিত বৈঠকটি ‘ইসরায়েলের ভবিষ্যতের জন্য এক বড় মোড় ঘোরানোর ঘটনা।’

ট্রাম্পের বক্তব্যকে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য বলে নিন্দা জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম। তিনি বলেন, ‘গাজাকে ওয়াশিংটনের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ট্রাম্পের মন্তব্য এই ভূখণ্ডকে জবরদখল করার ইচ্ছা ঘোষণার শামিল।’ গাজা উপত্যকা এখানকার জনগণের এবং তাঁরা এটি ছেড়ে যাবেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ‘অসাধারণ’ আখ্যা দিয়ে গত বুধবার নেতানিয়াহু ফক্স নিউজকে বলেন, ‘এটি আসলেই এগিয়ে নেওয়া উচিত…কেননা, আমি মনে করি, এটি সবার জন্য এক আলাদা রকমের ভবিষ্যৎ তৈরি করবে।’

অন্যদিকে কাৎজ বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা গাজার বাসিন্দাদের জন্য বিরাট সুযোগ তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া অসামরিক, হুমকিমুক্ত গাজা পুনর্গঠন কর্মসূচির অগ্রগতির পথও সুগম করতে পারে এটি।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নেতারা যা-ই বলুন, গাজার ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা তাঁদের ভূমি ছেড়ে না যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তাঁরা মনে করেন, গাজা থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হবে আরেকটি ‘নাকবা’ বা বিপর্যয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় সাত লাখ ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ছেড়ে চলে যান বা জোর করে তাঁদের বাস্তুচ্যুত করা হয়।

গাজার ৪১ বছর বয়সী বাসিন্দা আহমেদ হালাসা বলেন, ‘তাঁরা যা ইচ্ছা, করতে পারেন। কিন্তু আমরা আমাদের মাতৃভূমি আঁকড়ে থাকব।’

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.