এই পতাকার তলে, মনিরা মিতার মুক্তিযুদ্ধের গল্প
“পাচু” নামটা আতঙ্ক হয়ে ঘুড়ে বেরাচ্ছে ঘাসেরা গ্রামে। যুবক-বৃদ্ধা-নারী সবাই এই নামটা শুনলে ঘৃনায় মুখ বাঁকা করে। শিশুরা কথা না শুনলে বড়রা বলে “ ঐ যে পাচু আসছে”। সাথে সাথে শিশুদের দুষ্টমি বন্ধ হয়ে যায়। সবাই পাচুকে ভয় পায়। শুধু রিপন ভয় পায় না।
পশ্চিম আকাশে সূর্য লাল হয়ে আছে। এখনই সন্ধ্যা নামবে। সেই দুপুর থেকে রিপন এই গাছটার গোড়ায় বসে আছে। রিপন বড্ড একা। কেউ ওর সাথে কথা বলে না। এই বট গাছটাই ওর বন্ধু। রিপন ওকে নিজের মনের কথা বলে। ওকে আঁকড়ে ধরে কাঁদে। বট গাছটাও যেন ওর কথা বোঝে। রিপন যখন নিজের কথা বলে গাছটাও তখন নিজের ডালপালা দুলিয়ে সাড়া দেয়।
আজ রিপনের মনটা খুব খারাপ। ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু শিবু আজ গ্রাম ছেড়ে ওপার চলে গেছে। আগে ওপারে থাকার অর্থ রিপন বুঝতো না। এখন বোঝে। শিবু যাবার আগে বলে গেছে ওপার মানে ভারত। দেশ জুড়ে আগুন জ্বলছে। চারিদিকে লাশের গন্ধ। ওইতো সেদিন যখন রিপন আর শিবু নদীর ধারে ডাঙ্গুলি খেলছিলো তখনই একটা লাশ দেখতে পায়। প্রতিদিনই কচুরিপনার সাথে ভেসে ভেসে লাশ আসে। পুরুষ-মহিলা-শিশু সবার লাশ।
পাকিস্তানের দানবগুলো দেশটাকে লাশের স্তুপে পরিনত করেছে। শিবুরা হিন্দু বলে ওদের উপর অত্যাচার আরও বেশি। শিবুর দাদা পুরোহিত। রাজাকারগুলো ঘুরে ফিরে ওদের বাড়ি আসে। শিবুরা খুব ভয় পেয়ে যায়।
সেদিন রিপন আর শিবু বসে গল্প করছিলো। তখন রিপনের বাবা ওদের দেখতে পায়। সে রিপনের কাছে এসে দাঁত খিচিয়ে বলে “ এই নমোর সাথে কিসের এতো গল্প তোর?”
রিপন ওর বাবার লাল চোখ দেখে ভয় পায়। শিবু ভয়ে কুঁকড়ে যায়।
ও হ্যাঁ, তোমাদের তো বলা হয়নি রিপনের বাবার নাম ‘পাচু’। একালার আতঙ্ক পাচু রাজাকারের ছেলে রিপন। পাচুর প্রতি ঘৃনার রেশ রিপনের উপরের পরে। গ্রামের কেউ রিপনের সাথে কথা বলতে চায় না। শিবু ছাড়া অন্য কোন বন্ধু রিপনের সাথে খেলে না। রিপনের বড্ড কষ্ট হয়।
এইত কিছুক্ষণ আগে শিবু এসেছিল। শিবুর চোখের দিকে তাকিযে বুকটা কেঁপে ওঠে রিপনের। শিবুর চোখ দুটো জবা ফুলের মতো লাল। কাঁদতে কাঁদতে বালিশের মতো ফুলে গেছে চোখ দুটো। রিপন কিছু বলতে যাবে তখনই শিবু জড়িয়ে ধরে ওকে। হাউমাউ করে কাঁদে শিবু। হঠাৎ শো শো শব্দে বাতাস বইতে শুরু করে। বটগাছের শাখাগুলো জোরে জোরে দুলতে থাকে। গাছের পাতা ঝর ঝর করে ঝড়ে পড়ে। দুই কিশোরের দুঃখের সাথে প্রকৃতিও মিলেমিশে এক হয়ে যায়। ওদের দুঃখে বট গাছটাও কাঁদে।
মানুষের মতো চোখ থেকে পানি ঝড়ে না ওর। তবে পাতা ঝড়িয়ে তার শোক প্রকাশ করে। দুই কিশোরের করুণ আকুতি প্রকৃতিকেও বিষন্ন করে দেয়। শিবু বলে “আমি চলে যাচ্ছি রিপন। দেশ স্বাধীন হলে আবার দেশে ফিরে আসবো। তুমি আমার বাগানের গাছগুলো দেখিস।”
রিপন কথা বলতে পারে না কেবল মাথা নাড়ায়। শিবু আরও বলে “তোকে খুব মনে পড়বে রে। দেখিস আমি ঠিক ফিরে আসবো তোর কাছে। এই পথ ধরে আবার দুজন হেঁটে বেড়াবো। তুই আমার জন্য অপেক্ষা করিস।”
কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে শিবুর। আচমকা শিবু দৌঁড়ে গিয়ে বট গাছটাকে জড়িয়ে ধরে বলে ‘তুই আমাকে ভুলে যাসনে। দেশ স্বাধীন হলে আবার তোর ডালে পা দুলিয়ে বসে গল্প করবো।”
এমন সময় শিবুর দাদার ডাক কানে আসে। শিবু বলে ‘এবার যেতে হবে রিপন।’ কিন্তু রিপন ওর হাত শক্ত করে ধরে রাখে। শিবু-রিপন দু’জনেই কাদে। হয়ত বটগাছটাও কাদে।
শিবুর হাত ছাড়তে কলিজা ছিঁড়ে যায় রিপনের। শিবু চলে যাবার সময় বলে দেশে থাকলে যুদ্ধে যেতাম আমি। পাকিস্তানি শয়তানগুলো আর এদেশের রাজাকার গুলোকে উচিত শিক্ষা দিতাম।
শিবু যাবার পর থেকেই রিপনের মনটা বিষাদে ভরে আছে। রাজাকারের ছেলে বলে নিজের উপর ঘৃনা হয় রিপনের। না, না রিপনকে প্রমান করতে হবে যে তার বাবার মতো না। এদেশটা তাও। সেও ভালোবাসে এদেশটাকে।
রাতে রিপনদের বাড়ি রাজাকারদের মিটিং বসে। তার বাপ যেহেতু রাজাকারদের কমান্ডার সেহেতু প্রায় প্রতিদিনই মিটিং বসে তাদের বাড়িতে। রিপন নিঃশব্দে ওদের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। শুনতে চেষ্টা করে ওদের করিকল্পনা। রাজাকারদের হাসি আর উল্লাসে চলছে।বড় কিছুর পরিকল্পনা করছে ওরা। পাচু বলে ‘আমরা যদি এই কাজটা করতে পারি তবে মুক্তিরা সব এক সাথে মারা পড়বে। খান সাহেবরা আমাদের অনেক এনাম দেবেন। তাদের দয়ার শরীর। শোন মিয়ারা তোমরা ঠিকমত যে যার কাজ করবা। আগামীকাল রাতের অপারেশন খুব সাবধানে করতে হবে।
নিজের বাপের এমন নিষ্ঠুর কথা শুনে ঘৃনায় চোখ জ্বলে উঠে রিপনের। সে আরও ভালো ভাবে শুনতে চেষ্টা করে ওদের কথা। বুঝতে চেষ্টা করে ওদের পরিকল্পনা। আস্তে আস্তে রিপন বুঝতে পারে সব কিছু। খুব মারাত্মক পরিকল্পনা করছে ওরা।
রাতে ঘুম হয় না রিপনের। সারাক্ষণ মনে হয় যে করেই হোক মুক্তিবাহিনীদের ক্যাম্পে খবরটা পৌঁছাতে হবে। কিন্তু সে ক্যাম্পতো মাইল তিনেক দূরে। পথে যদি পাকিস্তপানিরা অথবা রাজাকাররা ধরে? রিপন ভাবে যদি ধরে, পাচু রাজাকারের পরিচয়টা না হয় কাজে লাগবে তখন। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পের দিকে হাঁটা শুরু করে রিপন। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ চলে আসে। আসে পাশে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে পথ চলে সে। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন চিৎকার করে বলে “রুক যাও।” রিপনের বুক ধুকপুক করে। দুই পাকিস্তানি বন্দুক তাক করে সামনে এগিয়ে আসে। একজন বলে ” এই লারকা ক্যন হে তুম? কাহা যাও?”
রিপন ঘাবড়ে যায়। মুখ থেকে কথা বের হয় না। পাকসেনারা রেগে গিয়ে ওকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে আসতে চায়। এমন সময় কলিমুদ্দিন রাজাকার ওখানে আসে। রিপনকে দেকেই সে চিনতে পার। স্যার, ‘এ ল্যারকা পাচু রাজাকারতা বেটা হে। উচকো ছোড় দেন। মে উচকো চিনতো হ্যায়।’
কলিমুদ্দিনের কথায় ওরা রিপনকে ছেড়ে দেয়। কলিমুদ্দিন জিজ্ঞাস করে রিপন কেথায় যাচ্ছে। রিপন বলে ‘আমার বন্ধু অনু অনেক অসুস্থ তাই ওকে দেখতে যাচ্ছি।’ কালিমুদ্দিন বলে ‘তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আইসো দ্যাশের অবস্থা ভালা না। শালার মুক্তিরা যদি তোমারে দ্যাহে তয় রক্ষা নাই তুমি আমাগো পাচু কমান্ডারের পোলা। তোমারে মুক্তিরা পাইলে মাইরা ফ্যালাইবো।’ রিপন মাথা নেড়ে সায় দেয়। হাঁটতে হাঁটতে কলিমুদ্দিনের কথাগুলো চিন্তা করে রিপন। সত্যি যদি মুক্তিযোদ্ধরা ওকে বিশ্বাস না করে? পাচু রাজাকারের ছেলে বলে যদি আটক করে?
‘না না মুক্তিযোদ্ধা অবশ্যই ভালো মানুষ। দেশের জন্য যুদ্ধ করছে তারা। তারা নিশ্চই রিপনের কথা বিশ্বাস করবে।’ মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পের কাছে যেতেই বুকটা ধক্ ধক্ করে রিপনের। এমন সময় দু’জন মুক্তিযোদ্ধা এসে সামনে দাঁড়ায় রিপনের। ‘এই ছেলে কে তুমি? এখানে কেন এসেছো।’ রিপন ভীতু ছেলে। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতের বন্দুক দেখে তোতলাতে শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা এটা বুঝতে পেরে বন্দুক নামিয়ে নেয়। রিপন বলে “আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ দিতে এসেছি। আপনাদের দল নেতার কাছে নিয়ে চলেন আমাকে।” মুক্তিযোদ্ধারা দু’জন কানেকানে কি যেন বলে তারপর একজন বলে ‘তোমাকে চেনা চেনা লাগছে, তুমি কি পাচু রাজাকারের ছেলে?’
রিপন হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়। সাথে সাথেই একজন এগিয়ে এসে হাত চেপে ধরে ওর। ‘রাজাকারের ছেলে বাপের পক্ষে কাজ করতে এসেছে? মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষতি করতে এসছে?’ রিপন তাদের বোঝাতে চেষ্টা করে সে রাজাকারদের দলে না। সে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতে চায়। কিন্তু ওরা কিছুতেই রিপনের কথা বিশ্বাস করে না। ওরা পিট মোড়া দিয়ে বাঁধে রিপনের হাত। তারপর ওকে নিয়ে যায় তাদের দল নেতার কাছে।
ওদের দল নেতাকে দেখে চমকে ওঠে রিপন। ‘নৃপেন দাদা,তুমি এখানে? তুমি না শিবু আর কাকিমাকে নিয়ে ওদেশে চলে গেলে?’
নৃপেন হাসে আরে পাগল এদেশটা আমার। দেশের এই সংকটে পালাই কি করে বলতো? শিবু আর মাকে ভারত রেখে আমি চলে এসছি। এদেশ থেকে ভিনদেশী কুত্তাগুলোকে তাড়িয়েই ছাড়বো।আর তাদের দালাল রাজাকারগুলোকে মৃত্যু উপহার দেব।’
নৃপেন দাদার কথায় রিপনের বুকটা গর্বে ফুলে ওঠে। নৃপেনের ঈশরায় রিপনকে ছেড়ে দেয় ওরা। নৃপেন বলে। তুই কেন এখানে এসেছিস?’
রিপন চুপিচুপি রাজাকাদের পরিকল্পনার কথা বলে ওদের। সবশুনে চিন্তায় পড়ে যায় নৃপেন। কিন্তু ওদের ভেতর একজন বলে ওঠে। নেতা ওর কথা বিশ্বাস করবেন না। ও রাজাকারের ছেলে। এটা নিশ্চই পাচু রাজাকারের চাল। ছেলেকে পাঠিয়ে আমাদের ধরার ব্যবস্থা করতে চায়।’
কথাগুলো রিপনের বুকে কাঁটার মতো বিধে। রাজাকারের ছেলে বলে কেউ তাকে বিশ্বাস করছে না। কিন্তু মনে প্রাণে রিপন চায় এদেশ স্বাধীন হোক। নৃপেন ওকে ধমকে দিয়ে বলে ‘আমি রিপনকে ছোটবেলা থেকে চিনি। ও আমার শিবুর বন্ধু। ও কখনও আমাদের কোন ক্ষতি করবে না।’
নৃপেনের কথায় রিপন স্বস্তি পায়। কথা শুনে নৃপেন বলে তুই বাড়ি ফিরে যা। রাতে বড়সড় গোলমাল হবে। শয়তানগুলোর কাউকে প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে দেব না আমরা। কিন্তু রিপন গো ধরে সে বাড়ি ফিরবে না। আজ রাতে সে এখানেই থাকবে। অবশেষে নৃপেন ওকে অনুমতি দেয় থাকার। সারাদিন মুক্তিযোদ্ধারা শলা পরামর্শ করে। রিপন ওদের কথাবার্তা অবাক হয়ে শোনে। রাইফেলগুলো হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখে। একজন মুক্তিযোদ্ধা বলে ‘কি ধরবে নাকি হাতে বন্দুক? আস আমি শিখিয়ে দেই গুলি চানানো।’
বন্দুকে হাত রাখতেই রিপনের বুকে ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে যায়। মন বলে রিপন তুই ও যুদ্ধ কর। রাজাকারের ছেলে হবার দুঃখ ঘুচিয়ে দে।
রাতের অন্ধকার আস্তে আস্তে আঁকড়ে ধরে সবাইকে। চারিদিকে সুনসান নিরাবতা। রাত একটু গভীর হলেই মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে বেড়িয়ে আসে। তারপর যে যার পজিশন মতো চলে যায়। রিপন বিজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধার মতো কাঁধে রাইফের নিয়ে নৃপেনের পিছু পিছু চলে। নৃপেন বলে যুদ্ধ শুরু হলে তুই এই বাঙ্কারে চলে যাস। রিপন মাথা নাড়ে।
ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর মশার গান ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না। রাত বাড়তে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা অধৈর্য্য হয়ে পড়ে। রিপন তাদের ঠিকঠাক খবর দিয়েছে কিনা এনিয়ে সন্দেহ হয় কারো কারো। রিপন নিজেও চিন্তিত। এমন সময় পাতার মরমর আওয়াজ কানে আসে। নৃপেন কান খাড়া করে শব্দ শোনে। মুখের ভেতর দু’আঙ্গল দিয়ে একটা পাখির মত ডাক দেয়। রিপন বুঝতে পারে এটা ওদের নিজের ভেতরের সংকেত। এ সংকেতের মানে শত্রুরা চলে এসেছে। নিজের পজিশনে অবস্থান করার সংকেত এটা। আবার শত্রুর পায়ের আওয়াজ, ফিসফিস শব্দ। নৃপেন আবার পাখির ডাক দেয়। অমনি চারিদিক থেকে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধারা। পাকিস্তানিরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওদের ঘিরে ধরে মুক্তিযোদ্ধারা। আতর্কিত এই হামলায় দিশেহারা হয়ে পড়ে ওরা। কারন দানবগুলো ভেবে ছিলো হয়ত মুক্তিযোদ্ধারা এখন গভীর ঘুমে। এই ফাঁকে ওরা আক্রমন করবে কিন্তু ঘটনা এমন উল্টো হবে এটা ওরা ভাবতে ও পারে নি।
পাকসেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। দু’ একজন এলোমেলো গুলি চালাতে থাকে। নৃপেন রিপনকে ইশারা করে বাঙ্কারে যেতে কিন্তু রিপন যায় না। হঠাৎ রিপনের চোখে পড়ে গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পাচু রাজাকারের দিকে। সে হয়তো পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছে পাকসেনাদের। পাচুর সাথে সেকেন্দার রাজাকার ও আছে। ঘৃনায় মুখে রক্ত উঠে যায় রিপনের। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক-গুলির শব্দ- পাচুর মুখ সব গোল পাকিয়ে ধাঁধাঁ লাগে রিপনের চোখে। পাচু তার হাতের রাইফেল দিয়ে এক মুক্তিযোদ্ধাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে যায়। এটা দেখে রিপনের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। নিজের হাতে থাকা বন্দুকের নিশানা করে নিজের বাপের বুক বরাবর। হাত কেঁপে ওঠার আগেই কাঁচা হাতে নিশানা ছোড়ে রিপন। না, মিস হয় না তার নিশানা। পাচু রাজাকার চিৎকার করে মাটিতে লুটিযে পড়ে। রিপন তখনও বন্দুক তাক করে আছে। পাচু রিপনকে দেখে চমকে উঠে বলে। তুই এখানে! আমার ছেলে হয়ে তুই আমাকে ………………।
কথা শেষ হয় না পাচু রাজাকারের। রিপন একজন মুক্তিযোদ্ধার জীবন বাঁচাতে একজন রাজাকারকে মেরেছে। রিপনের ঠোঁটের কোণে হাসি। কিন্তু হঠাৎ একটা গুলি এসে সে হাসি মালিন করে দিল। পাঁজরে লেগেছে গুলি। রিপন লুটিয়ে পড়ে। দৌঁড়ে এসে ওকে ধরে নৃপেন। ‘কিছু হবে না তোর। হাসপতালে নিয়ে যাব তোকে।’
রিপন বহু কষ্টে বলে ‘দাদা আমি রাজাকারের ছেলে হবার দায় মুক্ত হলাম আজ। দেশের শত্রু পাচু রাজাকারকে নিজ হাতে শেষ করেছি। আমার আর কোন দুঃখ নেই।’
রিপন পকেট থেকে একটা পাতাকা বের করে নৃপেনের হাতে দেয়। বলে ‘খুব ইচ্ছা ছিলো দেশ স্বাধীন হলে শিবু আর আমি মিলে এই পাতাকা উড়াবো। শিবু ফিরে এলে ওকে দিও এই পাতাকা।’
রাত ভোর হয়েছে।যুদ্ধ থেমে গেছে। পাকসেনাদের লাশ এখানে সেখানে পড়ে আছে। নৃপেন এখনও রিপনের পাশে বসে আছে। তার চোখে অশ্রু।
একজন মুক্তিযোদ্ধা এগিয়ে এসে নৃপেনের কাঁধে হাত রাখে। তারপর আস্তে আস্তে রিপনকে ঢেকে দেয় লাল- সবুজ পাতাকা দিয়ে।