সুধাসদনে এখনও জ্বলছে আগুন
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ৫ নম্বর সড়কে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধাসদনে এখনো আগুন জ্বলছে। মানুষ এসির যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে আসবাবপত্র যে যা পারছেন নিয়ে যাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালেও দেখা গেছে সুধাসদনের দোতলায় আগুন জ্বলছে। জানালা দিয়ে দেখা গেছে ভেতরে আগনু জ্বলছে। সেখানে অনেক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। যারা বিভিন্ন আসবাবপত্র নিয়ে যাচ্ছেন, এসির যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যাচ্ছেন।
পেশায় গাড়িচালক রাসেল নামের একজন বলেন, ‘আমি বাড়ির দলিলের ফটোকপি পেয়েছি। এটা নিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া একটি প্লাস্টিকের প্লেট পেয়েছি, সেটাও নিয়ে যাচ্ছি।’
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক (ঢাকা) মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, ‘ওখানে (সুধা সদন) যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। তাই ওখানে যাওয়া হয়নি।’
সকালে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা কন্ট্রোল রুমের মবিলাইজিং অফিসার খালেদা ইয়াসমিন বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে সুধা সদনে আগুনের খবর পাই। আমাদের নিরাপত্তা ছিল না। তাই সুধা সদনে আগুন নেভাতে যাওয়া সম্ভব হয়নি।’
বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে সুধা সদনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দোতলায় আগুন জ্বলছে। বাড়িটির সামনে পড়ে আছে ফ্রিজ, খাট, ওয়ারড্রব, সোফাসহ নানা সামগ্রী। নিচতলা থেকে চারতলার বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে আগুন ও ভাঙচুরের চিহ্ন দেখা গেছে। কোথাও কোথাও টাইলস খুলে ফেলা হয়েছে। পোড়া গন্ধ চারদিকে।
সুধা সদনের নিচ তলার কক্ষ সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তোশক, লেপ এসব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কাচের টুকরো পরে আছে অনেক স্থানে। বিভিন্ন তলার জানালার কাচগুলো পরে যাচ্ছে। বাড়িটির সামনে এখন উৎসুক কয়েকশ মানুষের ভিড়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ যেসব অক্ষত জিনিসপত্র আছে সেগুলো নিয়ে যাচ্ছে।
বেলা ১১টার পরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি।
ওই এলাকায় দায়িত্বরত ধানমন্ডি সোসাইটির নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, রাত সাড়ে ১০টার পর ১০ থেকে ১২টি ছেলে এসে সুধা সদনে আগুন দেয়। আগুন ভবনটিতে ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লোকেরা এসে এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে আশপাশের ভবনের বাসিন্দারা এসে পানি দিয়ে নিচতলার আগুন কিছুটা কমিয়েছেন।
দিবাগত রাত ১২টার সময় ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার বিভিন্ন কক্ষে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে অবস্থান নেওয়া শেখ হাসিনা বুধবার রাতে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ভাষণ দেন। একে কেন্দ্র করে বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য শরিফ ওসমান হাদি। পরে সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমিমুক্ত হবে।’
এরপর রাত আটটার দিকে বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা বাড়িটির ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করেন। পরে ওই ভবনে আগুন দেওয়া হয়। রাত ১২টার দিকে এক্সকাভেটর ও ক্রেন দিয়ে ভবনটি ভাঙা শুরু হয়।