ভ্যাটের চেয়ে বেশি হারে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা: অর্থ উপদেষ্টা

ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে মানুষ চাপে পড়ছে—এ বিষয়টি অনুভব করলেও কিছু কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে এটা করতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।  তিনি বলেছেন, অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবে যতটা না ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে, ব্যবসায়ীরা তার চেয়ে বেশি হারে দাম বাড়াচ্ছেন। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়েছে।

ভ্যাট বৃদ্ধির মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, ভ্যাট ছাড় থেকে বেরিয়ে আসা। অনেক খাতেই অনেক দিন ধরে ভ্যাট ছাড় চলছে; এসব তিনি আর উৎসাহিত করতে চান না। এই প্রক্রিয়ায় কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে এবং কিছু মানুষের কষ্ট হয়েছে। আপাতত লক্ষ্য হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা যায়, ততটা নিয়ন্ত্রণ করা।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয়–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা ও সরকারি ক্রয়–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

এই পর্যায়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আসতে কত দিন সময় লাগতে পারে। জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আরও দু-তিন মাস সময় লাগতে পারে। নিত্যপণ্যের আমদানি অব্যাহত থাকবে। জুন মাস নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে ৭ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তবে বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ ছাড়া আগামী মার্চ মাসে সংশোধিত বাজেট দেওয়া হবে, সেখানে কিছু কাজের পরিকল্পনা থাকবে বলে তিনি জানান।

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, যেকোনো সূচক যখন উঠতে শুরু করে, তখন বিপর্যয় ছাড়া তা সাধারণত মাথা নোয়াতে চায় না। শেয়ারবাজার হঠাৎ করে উঠে আবার পড়ে যেতে পারে; কিন্তু মূল্যস্ফীতির গতিপথ ভিন্ন। বাস্তবতা হলো, টাকার সরবরাহ বেশি ছিল, মানুষের হাতে টাকাও বেশি ছিল, সরবরাহব্যবস্থায় সমস্যা ছিল—এসব কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আবার কিছু অর্থনৈতিক কারণেও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়।

এ ছাড়া চাল, মসুর ডালসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধিতে সরকার আমদানির ব্যবস্থা করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, যেভাবে হোক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এসব পণ্যের সরবরাহ সরকার কোনোভাবেই কমতে দেবে না। চাল, ডাল, সয়াবিন তেল, সরকারের সঙ্গে এলএনজির আমদানি নির্বিঘ্ন রাখা হবে। বিষয়টি হলো, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে কেবল বৈদ্যুতিক বাতি নিভে যাবে তা নয়; বরং ব্যবসা-বাণিজ্যও বন্ধ হয়ে যাবে। এসব কারণে অর্থের চাপ পড়েছে। ভ্যাট বৃদ্ধির সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন তিনি। যেভাবে ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ চুরি হয়েছে, তাতে এসব ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশ অকল্পনীয় পর্যায়ে চলে যেত বলে তিনি মনে করেন। বলেন, এই পরিস্থিতি কি আর কোনো দেশে হয়েছে—পরিচালকেরা নিজেদের টাকা নিয়ে যায় এমন দেখা গেছে; কিন্তু এখানে তো আমানতকারীদের টাকা চলে গেছে। মাত্র ১২টি ব্যাংক কার্যকরভাবে কাজ করছে, বাকিগুলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। সেই অবস্থা থেকে এই সরকার শুরু করেছে।

এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার অর্থ সংস্থানের চেষ্টা করছে। বিশেষ তহবিল করে কীভাবে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো যায়, বিশেষ করে সিএমএসএমই খাতে ঋণ বৃদ্ধি করা যায়, সেই চেষ্টা করছে সরকার।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.