তীব্র জন-দুর্ভোগ, আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর শিক্ষার্থীদের, ৬ ঘণ্টা পর চলল ট্রেন
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করার কথা জানানো হয়। এর আগে দাবি আদায়ে সোমবার সকালে গুলশান ও বনানীর বিভিন্ন সড়ক এবং বিকালে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এর ফলে গুলশান-বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট ও মগবাজার এলাকায় এ সময় তৈরি হয় ভয়াবহ যানজট। সারাদেশের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল বিকাল থেকে শিক্ষার্থীদের চারপাশ ঘিরে রাখেন পুলিশ সদস্যরা। প্রস্তুত রাখা হয় জলকামান। মোতায়েন রয়েছে চার প্লাটুন বিজিবি।সারা দিন মানুষের তীব্র ভোগান্তির পর কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা আসে।
আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা : গতকাল রাত সাড়ে ৯টা ৩৬ মিনিটে মহাখালী রেলক্রসিংয়ে আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্যের’ নেতা ও অনশনরত শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম। গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা অনশন প্রত্যাহার করছি।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আরেক নেতা নায়েক নূর এ সময় বলেন, ‘আমরা আন্দোলন সাত দিনের জন্য স্থগিত করছি। মন্ত্রণালয় যেসব আশ্বাস দিয়েছে, তা বাস্তবায়নে কার্যকর অগ্রগতি না দেখলে আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আন্দোলনে নামব।’ পরে অনশনরত শিক্ষার্থীদের জুস খাইয়ে অনশন ভাঙান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান ও কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রাণী মণ্ডল।
সড়কে অবরোধ, বিক্ষোভ : দুপুরে রাস্তায় নামার পর আন্দোলন শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের অনশন কর্মসূচি শুরুর ২৪ ঘণ্টা পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একজন প্রতিনিধি এসে আশ্বাস দিয়েছিলেন। পরে আবার জানানো হয়, কিছু হবে না। আমরা কারও মুখের কথা আর বিশ্বাস করতে চাই না। যতক্ষণ পর্যন্ত তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি দেওয়া না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না, আন্দোলন চালিয়ে যাব।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা নেই। সরকার সাতটি কলেজকে একত্রিত করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের চিন্তা করছে। শিক্ষা উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর রবিবার সন্ধ্যায় নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল দুপুর ১২টার পর গুলশান লিংক রোডে বাঁশ ফেলে বিক্ষোভ শুরু করেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধের ফলে মহাখালী ও আশপাশের এলাকাজুড়ে ভয়াবহ যানজটে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী, পথচারীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মগবাজার থেকে গুলশান-বনানী সড়ক একেবারেই থমকে থাকতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় বাস থেকে নেমে হেঁটেই গন্তব্যে ছোটেন অনেকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেন আটকে থাকায় ট্রেনযাত্রীদের ভোগান্তিও ছিল অবর্ণনীয়।
রেলপথে অবরোধ, ছয় ঘণ্টা পর চলাচল শুরু : এরপর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মহাখালীতে রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রেন আটকা পড়ে। সরেজমিন দেখা যায়, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা মহাখালী রেলগেটে লাইনের ওপর শুয়ে পড়ে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রেন আটকে দেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল।
গতকাল বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রেলপথ অবরোধ করেন। তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত রেলকর্মীরা লাল পতাকা দেখিয়ে রেললাইন ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যান। পরে লাইনে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক লাল পতাকা দেখে ধীরে ধীরে ট্রেনের গতি থামিয়ে মহাখালী রেলগেটের কাছাকাছি এসে ট্রেনটি থামাতে সক্ষম হন। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় দিনের ১৮টি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা থেকে ছাড়ার অপেক্ষায় থাকে। পরে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে অবরোধের৬ ঘণ্টা পর কমলাপুর থেকে ট্রেন চলাচল পূনরায় শুরু হয়।
দুই উপদেষ্টার বক্তব্য : এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেই সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। একই সাথে কর্মসূচিতে যেন জনভোগান্তি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখার আহ্বান জানান তিনি। গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজাম-প পরিদর্শন শেষে এই আহ্বান জানান নাহিদ।
অন্যদিকে গতকাল শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তাব্যবস্থা সংক্রান্ত সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা লোকজনকে অতিষ্ঠ করে ফেলছেন। দিনের পর দিন তাদের দাবি-দাওয়া বেড়েই চলছে। এটার পেছনে কারা জড়িত সেটাও কিন্তু আপনারা জানেন। এটা কিন্তু আপনারা প্রচার করেন না। সাংবাদিকরা জড়িতদের সম্পর্কে কিছু জানেন না বললে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি কেন বলব, আপনারা জানেন না? যেটা আপনারা জানেন, সেটা কেন আমি বলব?’
একই দিন শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ-সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌক্তিকতা পাচ্ছে না। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, তিতুমীর কলেজে শিক্ষার্থীদের আরও দুটি দাবি জানিয়েছে। এর একটি হচ্ছে আরও বেশি পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক নিয়োগ। সে সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্বিতীয় দাবি অনুযায়ী, গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়াতে রাজি হয়েছে সরকার।