বাংলা একাডেমির আদব-কায়দা না থাকলে কী করব : সলিমুল্লাহ খান

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে পুরস্কৃতদের পেছনে দাঁড় করিয়ে রাখা নিয়ে সমালোচনা করেছেন লেখক ও প্রাবন্ধিক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেছেন, ‘বাংলা একাডেমি যদি মানুষকে সম্মান প্রদর্শন করতে না জানে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করব নাকি? তাদের আদব-কায়দা যদি না থাকে আমরা কী করব?’

তিনি বলেন, ‘লোকজন বলছে, আপনি পুরস্কার নিলেন কেন? আরে..পুরস্কার নেওয়ার পরেই তো বেইজ্জতটা করছে।’

রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সংলগ্ন হাকিম চত্বরে জাতীয় কবিতা উৎসবের সমাপনী দিনে ‘স্বাধীনতা সাম্য ও সম্প্রীতি: বাংলাদেশের কবিতা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন লেখক ও প্রবীণ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

গত শনিবার অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার প্রদানের পর পুরস্কৃতদের পেছনে রেখে প্রধান উপদেষ্টা, সংস্কৃতি উপদেষ্টা, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক চেয়ারে বসেছিলেন। এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হয়।

অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ টেনে সলিমুল্লাহ খান বলেন, বাংলা একাডেমির পুরষ্কার প্রদানের অনুষ্ঠান নিয়ে অনেকে ট্রল করছে। আমাকে জিজ্ঞেস করছে- ছাত্রদের সামনে বসিয়ে আপনারা পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন? আমি বলেছি, তারা ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বসেছে। বাংলা একাডেমি যদি মানুষকে সম্মান প্রদর্শন করতে না জানে আমরা তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করব নাকি? তাদের আদব-কায়দা যদি না থাকে আমরা কী করব?

তিনি বলেন, এখানেও দাসত্বের অবসান করতে হবে। দাসত্বের অবসান করতে হলে সবাইকে এক করতে হবে। সকলেই যদি আমরা সমান না হই তাহলে আমরা এক হব না।

জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত এই উৎসবে আরও আলোচনা করেন মঞ্জুরুর রহমান, কুদরতে খোদা, সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক সোহরাব হোসেন।

সভাপ্রধানের বক্তব্যে আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, বাংলা ভাষার সাহিত্য অনেক উন্নতমান সমৃদ্ধ। আমাদের কবিরা যদি বাংলা ভাষায় অসাধারণ কিছু লেখেন যেটা ক্লাসিকাল পর্যায়ের, কালজয়ী হয় তাহলে সেটা আমাদের ভাষার জন্য-জাতির জন্য সমৃদ্ধির হবে, অসাধারণ কৃতিত্বের হবে। রবীন্দ্রনাথও এই ভাষায় কবি হয়েছেন। মাইকেল মধুসূদনও এই ভাষায় কবি হয়েছেন।

তিনি বলেন, কবিরা এমন বিষয় লক্ষ্য করেন, তাদের এমন অভিজ্ঞতা হয় যেটা মূল্যবান, যেটা চারপাশে অন্যরা অনুভব করেন না। কবিদের দেখার দৃষ্টি তেমনি ভিন্ন হয়। কবিরা তাদের সেই অভিজ্ঞতা, আবেগ, অনুভূতিকে অন্যের সঙ্গে ছড়িয়ে দিতে চান। এভাবে ভাষার মাধ্যমে যেটি প্রকাশ করেন সেটাই কবিতা।

এর আগে সকাল ১০টায় ফ্যাসিবাদবিরোধী ও গণঅভ্যুত্থানের গানের মাধ্যমে দ্বিতীয় দিনের কবিতা পাঠ শুরু হয়। এ দিন সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কবিতাপাঠের ৬ষ্ঠ পর্বে সভাপতিত্ব করেন সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান।

আবু সাঈদ খান বলেন, মানুষের মধ্যে যেমন ভাগ আছে, বিভাজন আছে তেমনি কবিদের মধ্যেও বিভাজন আছে। কোনো কবি রাজপথে, কোনো কবি রাজসভায়। আবার বেশিরভাগই মধ্যপন্থার। মধ্যপন্থার হলে সুবিধা আছে, পক্ষ ত্যাগ করা যায়। কিন্তু এবার আমরা লক্ষ্য করেছি, রাজপ্রাসাদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে এদের সংখ্যাই বেশি।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.